মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ বাড়ছে

বুধবার, জুলাই ২, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে রাজনৈতিক বিভেদ বাড়ছে

জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে টালবাহানা সহ্য করা হবে না এমন হুঙ্কার বারবার দিয়ে আসছিলো নতুন রাজনৈতিক দল জানায় নাগরিক পার্টির নেতারা। কিন্তু তাতেও গত ১০ মাসে সরকারিভাবে জুলাই ঘোষণাপত্র হয়নি। এবার রাজনীতে আবারও আলোচনায় সেই জুলাই ঘোষণাপত্র। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ঘোষণাপত্র দেওয়ার কথা থাকলেও তা না হওয়ায় এবার রাজনীতিতে অনেকটা বিভক্তির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এবার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে আগামী ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এককভাবে ঘোষণাপত্র দেওয়ারা কথা জানায় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ নিয়ে ফের রাজনীতিতে বিভেদ ও বিরোধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে জানায় একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতারা। এমনকি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দূর হওয়া অনিশ্চয়তার মেঘ ফের জমতে শুরু করতে পারে এই ঘোষণাপত্র নিয়ে। বিরোধ চাঙ্গা হলে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায়ও প্রভাব পড়তে পারে ধারণা তাদের।

তবে সরকার বলছে, এই ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি এবং রাজনীতির মাঠ গরম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে খুব সিরিয়াস। এটি যেন ঐক্যের সনদ হয় তা নিয়ে কাজ চলছে। যত দ্রুত সম্ভব জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। এনসিপি যে ঘোষণা দিয়েছে, তা সরকারের কাছে পরিষ্কার না। এটি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে।

এনসিপি আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম এক এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জুলাই ঘোষণাপত্র সরকারের দেওয়ার কথা ছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির ওই সময় সরকার ৩০ কার্যদিবস সময় দিয়েছিল। সেই ৩০ কার্যদিবস পার হয়ে গেছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ আমরা দেখিনি। গত বছরের ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। তাই এ বছর ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।

তিনি বলেন, জুলাইয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংবিধানিক স্বীকৃতি, শহিদের স্বীকৃতি ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরই জুলাই ঘোষণাপত্রটি প্রয়োজন। সরকার যেহেতু বলেছিল সবাই আলোচনা করে ঐকমত্যের মাধ্যমে এটি দেবে। পুনরায় প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। সারা দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা এবং তাদের প্রত্যাশা শুনে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ৩ আগস্ট শহিদ মিনারে ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ইশতেহার পাঠ করব।

‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের ঐক্য, ফ্যাসিবাদবিরোধী চেতনা ও রাষ্ট্র সংস্কারের আকাক্সক্ষাকে সুসংহত রাখার প্রত্যয়ে’ ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর জুলাই ঘোষণাপত্রের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে সামনে আনা হয়। তখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানিয়েছিলেন, ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র উত্থাপন করা হবে।

ঘোষণাপত্রে দুটি মৌলিক বিষয় হিসেবে ১৯৭২ সালের সংবিধানকে ‘মুজিববাদী সংবিধান’ আখ্যায়িত করে এর ‘কবর রচনা করা ও নাৎসিবাদী আওয়ামী লীগকে অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করার কথা বলা হয়। পরদিন ৩০ ডিসেম্বর রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে। পরবর্তীতে জুলাই ঘোষণাপত্রের খসড়ার কিছু বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ভিন্ন মতামত ব্যক্ত করে।

দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি কয়েকটি বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে। পরবর্তীতে বিএনপি তাদের লিখিত প্রস্তাব জমা দেয়। বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে বিএনপি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত দিয়েছে। এর বাইরে সরকার কিছু করলে বিএনপি তাতে একমত হবে না। এমন কিছু হলে এ নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হতে পারে, যা জাতীয় নির্বাচনকে বিলম্বিত করার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।

এনসিপি নেতারা বলছেন, সরকার জুলই ঘোষণাপত্র নিয়ে কি করছে, তারা তা জানেন না। সরকার জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের সময়সীমা দিয়েছিল তা পেরিয়ে গেছে। কেন প্রকাশ হচ্ছে না সে বিষয়েও কিছু বলছে না। সরকার কথা না রেখে প্রতারণা করেছে। এটি ষড়যন্ত্র। তাই এনসিপি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছে। এটির সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করলে কোনো রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি হবে না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলো এটি সাদরে গ্রহণ করবে। জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলন ছাত্ররা শুরু করলেও পরে রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে না এলেও এই আন্দোলনে একমত হয়ে শরিক হয়।

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আরিফুর রহমান তুহিন বলেন, সরকার এখন শুধু নির্বাচনমুখী হতে চাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে সমন্বয় করেই এটি করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকের পর জুলাই ঘোষণাপত্র আড়ালে চলে গেছে। এটিকে এনসিপি ষড়যন্ত্র বলে মনে করে। তিনি বলেন, সরকার কেন জুলাই ঘোষণাপত্র দিচ্ছে না তাও বলছে না। আমরা ঘোষণা দিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। নির্বাচনের আগে জুলাই ঘোষণাপত্র এবং সংস্কার হতে হবে। আমরা মনে করি, এনসিপি জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করলে এটি নিয়ে কোনো কনফ্লিক্ট তৈরি হবে না।

এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সেক্রেটারি ফয়েজ আহম্মদ বলেন, এনসিপি যে ঘোষণা দিয়েছে সেটি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি হতে পারে। এ বিষয়ে সরকার পরিষ্কার না। এটি নিয়ে অনৈক্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগস্ট পূর্ববর্তী সময়ে সবাই শেখ হাসিনার পদত্যাগ এবং ফ্যাসিবাদের বিদায় চেয়েছে, এ বিষয়ে সবাই একমত ছিল। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে ঐকমত্য রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সরকার দায়িত্ব নিয়েছে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ করবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে। এককভাবে করলে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব বাড়বে।