বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

অপ্রাপ্ত বয়সে চুলে পাক ধরলে করণীয়

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
চুলে

চুল মানুষের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ। বয়সের সঙ্গে চুলের রঙ ধীরে ধীরে ফিকে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যখন স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়ের মাথায় কিংবা ২০–২৫ বছরের তরুণ-তরুণীর চুলে পাক ধরতে শুরু করে, তখন তা অকালপক্বতার লক্ষণ। অভিভাবকদের কাছে এটি উদ্বেগজনক হলেও চিকিৎসকরা বলছেন—এখন বিষয়টি বেশ সাধারণ হয়ে উঠেছে। তবে এর পেছনে আছে কিছু জিনগত ও শারীরিক কারণ, যা জানা জরুরি।

কেন অল্প বয়সে চুলে পাক ধরে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, অকালপক্বতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো জিনগত প্রভাব। শতকরা ৯৫ ভাগ ক্ষেত্রে অল্প বয়সে চুল পাকার বিষয়টি আসে পরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে। অর্থাৎ, যদি কারও বাবা-মায়ের অল্প বয়সেই চুল পেকে থাকে, তবে সন্তানের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা দিতে পারে।

তবে বাকি ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে চুল পাকার মূল কারণ হলো শরীরে ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি, হরমোনজনিত সমস্যা কিংবা দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা। ২০১৯ সালে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ অ্যাপ্লায়েড রিসার্চ–এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের প্রায় ১০.৬ শতাংশ স্কুলপড়ুয়ার মাথায় আগেভাগেই চুল পেকে গেছে।

খাবারের প্রভাব

বর্তমান প্রজন্মের শিশু-কিশোররা অধিকাংশ সময়েই জাঙ্ক ফুড, কোমল পানীয় ও অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি আসক্ত। ফলে তাদের নিয়মিত ডায়েটে প্রয়োজনীয় সবুজ শাক-সবজি, ফলমূল ও পুষ্টিকর খাবারের ঘাটতি দেখা দেয়। শরীরে যখন পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে না, তখন তা চুলের কোষের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং চুল আগেভাগেই সাদা হয়ে যায়।

স্ট্রেস ও অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

আধুনিক জীবনযাপনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো চাপ বা স্ট্রেস। পড়াশোনার চাপ, প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ কিংবা সামাজিক অস্থিরতা শিশু-কিশোরদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করে। অতিরিক্ত স্ট্রেস শরীরে আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিডসহ বিভিন্ন খনিজের ঘাটতি তৈরি করে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে চুলের রঙে।

এ ছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন কিংবা মাদক গ্রহণও অকালপক্বতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

স্বাস্থ্যগত সমস্যা

চিকিৎসকরা আরও জানাচ্ছেন, লিভারের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা, হরমোনজনিত অসামঞ্জস্য, রক্তস্বল্পতা বা থাইরয়েডের সমস্যার কারণেও অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে। তাই হঠাৎ করেই যদি চুলে পাক ধরা শুরু হয়, তবে অবহেলা না করে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

করণীয় কী?

প্রথমেই মনে রাখতে হবে, একেবারেই চুল পাকা ঠেকানো সম্ভব নয়। তবে সঠিক যত্ন ও জীবনযাপনের মাধ্যমে চুলে পাক ধরার গতি কমিয়ে আনা যায়।

১. পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ: প্রতিদিনের খাবারে শাক-সবজি, দুধ, ডিম, বাদাম, ডাল, ফলমূল অন্তর্ভুক্ত করুন। এগুলো চুলের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ সরবরাহ করে।
২. স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণ: নিয়মিত ব্যায়াম, যোগব্যায়াম, ধ্যান ইত্যাদি স্ট্রেস কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
৩. চুলের যত্ন: প্রাকৃতিক তেল যেমন নারকেল তেল, অলিভ অয়েল বা আমলকির তেল দিয়ে নিয়মিত চুল ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে এবং চুল মজবুত হবে।
৪. ক্ষতিকর অভ্যাস পরিহার: ধূমপান, অ্যালকোহল ও মাদক চুলের ক্ষতি করে। এগুলো যত দ্রুত বাদ দেওয়া যায়, তত ভালো।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ: চুল পাকার সঙ্গে যদি অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা যুক্ত হয়, তবে দেরি না করে বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে।

পাকা চুল কি আবার কালো হয়?

চুল একবার পেকে গেলে তা আবার প্রাকৃতিকভাবে কালো হয়ে ওঠা খুব কঠিন। তবে পুষ্টিকর খাবার, সঠিক যত্ন ও ভেষজ উপাদান ব্যবহার করে চুল পাকার গতি ধীর করা যায়। অনেকেই প্রাকৃতিকভাবে হেনা বা ভেষজ রং ব্যবহার করেন, যা চুলকে ক্ষতি না করেই কালচে আভা ফিরিয়ে আনে।

শেষ কথা

অপ্রাপ্ত বয়সে চুল পাকা কোনো বিরল সমস্যা নয়, বরং বর্তমান সময়ে তা অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। জিনগত প্রভাব থাকলে তা পুরোপুরি এড়ানো যায় না। তবে সুস্থ জীবনযাপন, পুষ্টিকর খাদ্য এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যার গতি কমানো সম্ভব। সবচেয়ে বড় কথা, চুল পাকা নিয়ে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা না করে প্রয়োজনীয় যত্ন ও চিকিৎসার দিকে মনোযোগী হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।