বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

এবার ইরাকের ওপর নজর নেতানিয়াহুর

সোমবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার ভাষণের শুরুতেই ইরান ও আঞ্চলিক প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। একইসঙ্গে তিনি ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার হুমকি দেন এবং প্রকাশ্যে তাদের লক্ষ্যবস্তু করার ঘোষণা করেন।

এই হুমকিকে ইরাকের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে বাগদাদ। ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুয়াদ হুসেইন সতর্ক করে বলেছেন, ‘ইরাকের যে কোনো নাগরিকের ওপর হামলা গোটা জাতির ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত হবে।’

ইরানি সংবাদ সংস্থা মেহেরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিশ্লেষক মোহাম্মদ বাঘের হেইদারি বলেন, নেতানিয়াহুর এ ধরনের বক্তব্য নতুন নয়। ইসরাইলি কর্মকর্তারা বহু বছর ধরে ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে হামলার হুমকি দিয়ে আসছেন। প্রায় এক বছর আগে একই ধরনের একটি ঘটনার সময় ইরাক জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করে, যার ফলে আক্রমণ প্রতিহত হয়।

ইসরাইলের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা

হেইদারি ব্যাখ্যা করেন, ইসরাইলের ইরাক সংক্রান্ত নীতির দুটি দিক রয়েছে। একটি আঞ্চলিক, অন্যটি ইরাকের অভ্যন্তরীণ। আঞ্চলিকভাবে, ইসরাইল ইরাককে আলাদা করে দেখে না। তারা গোটা অঞ্চলজুড়ে প্রভাব বিস্তার করতে ‘গ্রেটার মিডল ইস্ট’ প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং কথিত ‘ডেভিড করিডোর’ গঠনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই করিডোর সিরিয়ার একটি বড় অংশ থেকে শুরু করে ইরাকের এরবিল ও সুলাইমানিয়া হয়ে পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। ইসরাইলি নেতারা প্রকাশ্যে এ বিষয়ে কথা বলছেন।

আরেকটি দিক হলো, ইসরাইল শুরু থেকেই বলেছে তারা সাতটি ফ্রন্টে সামরিকভাবে সক্রিয় হবে। এর মধ্যে রয়েছে—গাজা, পশ্চিম তীর, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরান এবং ইরাক। এই সাতটির মধ্যে ছয়টিতে তারা ইতোমধ্যেই সামরিক অভিযান চালিয়েছে, একমাত্র বাকি ছিল ইরাক, যেটিতে ঢোকার ঘোষণা তারা আগেই দিয়েছিল।

নির্বাচনের প্রাক্কালে হুমকির তাৎপর্য

বর্তমানে ইরাকে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে। রাজনৈতিক উত্তেজনা ও দলগুলোর মধ্যে সংঘাত বেড়ে গেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সমন্বয় ফ্রেমওয়ার্ক জোট নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, যা ইসরাইলের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে। তাই নির্বাচনের আগে ইসরাইলি হুমকি আসছে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার কৌশল হিসেবেও। যদি নির্বাচন ব্যাহত হয়, বর্তমান সরকার কার্যত সীমিত ক্ষমতাসম্পন্ন অন্তর্বর্তী সরকারে পরিণত হবে, যা দেশে নতুন অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।

এছাড়া, প্রাক্তন বাথ পার্টির সদস্যদেরও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে, যা ইরাকের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। যদি নির্বাচন ব্যাহত হয়, তাহলে আল-সুদানির সরকার কার্যকরভাবে একটি তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনে পরিণত হবে যার কর্তৃত্ব সীমিত থাকবে যতক্ষণ না নতুন নির্বাচনের নিষ্পত্তি হয়।

এসব ইঙ্গিত স্পষ্ট করে যে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোই কেবল লক্ষ্যবস্তু নয়, বরং সমগ্র ইরাকের নিরাপত্তা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক সম্পদ সমন্বিতভাবে হামলার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হচ্ছে। অথচ গত এক থেকে দুই বছর ধরে দেশটি তুলনামূলক অভূতপূর্ব শান্তি উপভোগ করছিল। এখন মনে হচ্ছে, এই স্থিতিশীলতা নষ্ট করে নতুন অস্থিরতার সূচনা করার জন্য একটি পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর ভূমিকা ও চুক্তি

এক বছর আগে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানির একটি সমঝোতা হয়। গাজায় ইসরাইলি হামলার সময় এই গোষ্ঠীগুলো ‘ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স অব ইরাক’ নামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ড্রোন ও মিসাইল দিয়ে ইসরাইলকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। কিছু আক্রমণ ব্যর্থ হলেও কিছু সফলভাবে পৌঁছেছিল। এতে ইসরাইলের হুমকি আরও বেড়ে যায় এবং ইরাক জাতিসংঘে অভিযোগ দায়ের করে। পরে এক চুক্তির মাধ্যমে কম সময়ের জন্য হলেও হলেও শান্তি ফিরে আসে।

সেই চুক্তির মূল কথা ছিল, প্রতিরোধ গোষ্ঠী আপাতত হামলা চালাবে না। তবে যদি ইসরাইল ইরাককে আক্রমণ করে, তাহলে সরকার কূটনৈতিকভাবে প্রতিবাদ করবে এবং এরপর প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো আমেরিকান স্বার্থ ও ইসরাইলি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানবে। তাই হেইদারির মতে, এই হুমকিতে ইরাকি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, এমন সম্ভাবনা কম।