ওজন বেড়ে যাওয়াটা আজকাল অনেকের কাছেই মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওজন বিশেষ করে যাঁরা শহুরে জীবনে কর্মব্যস্ত থাকেন, তাঁদের মধ্যে ওজন বাড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে আপনি কি জানেন, শুধু খাবার নয় ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে ঘুমের অভাব ও সকালের অভ্যাসগুলো-ও বড় ভূমিকা রাখে?
ভারতীয় চিকিৎসক ডা. জয়শন পাল বলেন, “ওজন কমানোর জন্য শুধু খাবার নিয়ন্ত্রণ করলেই হবে না, বরং পর্যাপ্ত ঘুম ও সকালের সঠিক অভ্যাসও খুব জরুরি।”
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, সকালে কোন ৫-৭টি অভ্যাস আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে

ওজন কমাতে ঘুম থেকে উঠে দুই গ্লাস পানি পান করুন
সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে দুই গ্লাস পানি পান করা একটি চমৎকার অভ্যাস। পানি শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং শরীরকে ভিতর থেকে পরিষ্কার রাখে।
পানিতে কোনো ক্যালরি না থাকলেও এটি শরীরের ক্যালোরি বার্নে সহায়তা করে। দিনে অন্তত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করাটা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর।
ঝালজাতীয় খাবার রাখুন সকালের নাস্তায়
সকালের নাস্তায় সামান্য ঝাল—যেমন মরিচ, ব্ল্যাক পেপার বা ঝাল সস—যোগ করলে হজমশক্তি বাড়ে এবং ফ্যাট বার্ন হয় দ্রুত। গবেষণায় দেখা গেছে, ঝাল খাবার দেহের তাপমাত্রা বাড়িয়ে অতিরিক্ত ক্যালোরি খরচ করতে সাহায্য করে।
তবে যাঁদের গ্যাস্ট্রিক বা অম্বলের সমস্যা আছে, তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবারে ঝাল ব্যবহার করবেন।

দারচিনির চা পান করুন
দারচিনির চা খুব ভালো একটি প্রাকৃতিক ডিটক্স পানীয়। এটি শরীর থেকে টক্সিন দূর করে ও মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে সকালে এক কাপ গরম পানিতে দারচিনি ফুটিয়ে দারচিনির চা তৈরি করে নিতে পারেন।
এটি খেলে হজমশক্তি বাড়ে, রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ক্ষুধা কমে যায়।
চিয়া বীজ খেতে পারেন
চিয়াবীজ এখন অনেকের কাছে সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজ।
চিয়াবীজ দুধ বা টক দইয়ের সঙ্গে ভিজিয়ে খাওয়া যায়। এটি খেলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে এবং রক্তে শর্করার মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ইচ্ছাও কমে।
শরীরকে দিন সকালে রোদ লাগার সুযোগ
সকালের নরম রোদে শরীর গরম হয়, ভিটামিন ডি পাওয়া যায় এবং মেটাবলিজমে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সকালবেলায় রোদ পায়, তাদের ওজন তুলনামূলকভাবে কম থাকে।
সকাল ৮টার আগের রোদ শরীরের জন্য সবচেয়ে উপকারী। দিনে ১০-১৫ মিনিট রোদে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যায়।

হালকা হাঁটাহাঁটি করুন
সকালে হাঁটা শরীরের জন্য দারুণ উপকারী। প্রতিদিন মাত্র ২০ মিনিট হাঁটলেও ক্যালোরি কমে, পেশি শক্তিশালী হয় এবং হার্ট ভালো থাকে।
শরীরচর্চা যারা নিয়মিত করতে পারেন না, তারা দিনের শুরুতে হালকা হাঁটাহাঁটি করেও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
শেষ কথা
ওজন কমানো অনেকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু প্রতিদিন সকালে মাত্র কয়েকটি অভ্যাস পাল্টালেই এটি সম্ভব। পর্যাপ্ত ঘুম, পানি পান, হালকা শরীরচর্চা ও পুষ্টিকর খাবার—এই কয়েকটি কাজ নিয়ম করে করলে শরীর সুস্থ থাকবে এবং ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
তাই আজ থেকেই শুরু করুন এই সহজ অভ্যাসগুলো। মনে রাখবেন—ওজন কমানো মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, এটি হলো সুস্থ থাকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
সকালের যেসব অভ্যাসে আপনার ওজন বাড়ছে
ওজন বৃদ্ধি পাওয়া বেশিরভাগ মানুষেরই প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওজন বৃদ্ধি নিয়ে অনেকের খুব বেশি চিন্তা থাকলেও এটি কেন বাড়ছে বা ওজন কমানোর কার্যকরী চেষ্টা করার লোকের সংখ্যা খুব বেশি নয়। সকালের কয়েকটি অভ্যাসের কারণে ওজন বাড়ার প্রক্রিয়া আরও দ্রুত হয়। চলুন তেমন কয়েকটি অভ্যাস সম্পর্কে জেনে আরও সতর্ক হই।
বেশি ঘুম
আগের চেয়ে আপনার ওজন বাড়ছে। এ নিয়ে চিন্তিত কিন্তু সকালের বাড়তি ঘুম থেকে বিরত হন না, তাহলে এতে খুব বেশি লাভ হবে না। কারণ সকালের বাড়তি ঘুম শরীরের ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তবে রাতে সাধারণত সাত ঘণ্টার কম ঘুমানো উচিত নয়।
সকালের নাস্তা না খাওয়া
কেউ যাই বলুক না কেন সকালের নাস্তা বাদ দেয়া উচিত নয়। সকালে খাবার না খাওয়া আপনার বিপাককে প্রভাবিত করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে ব্যাহত করতে পারে। এটির কারণে ওজন বাড়ার উচ্চতর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া সকালের নাস্তা না খেলে সারাদিন হতাশা ও অলসতা দেখা দিতে পারে।
মেডিটেশন না করা
ভোরের মেডিটেশন শরীরের জন্য অত্যন্ত কার্যকরী। এটি ওজন কমাতে অত্যন্ত সাহায্য করে। মেডিটেশন করটিসোল নামক স্ট্রেস-প্ররোচিত হরমোন হ্রাস করতে সহায়তা করে। আর এটি না করলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সকালের মেডিটেশন সারাদিনকে আরও আনন্দময় করে তুলতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান না করা
এক গ্লাস পানি দিয়ে দিনের যাত্রা শুরু করা উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠে এক গ্লাস পানি খাওয়া একটি আদর্শ অভ্যাস। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া সারাদিনেও পরিমাণ মতো পানি পান করতে হবে। পানির ঘাটতি শরীরে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, সেগুলোর কারণে ওজন বেড়ে যেতে পারে।