খাবারের পর কিছু অভ্যাস এড়ানো জরুরি। আমরা অনেকেই খাবারের পর এমন কিছু কাজ করি, এই অভ্যাস আমাদের অজান্তেই শরীরের ক্ষতি ডেকে আনে। খাবার খাওয়ার পরপরই খাবার হজম হয়ে পুষ্টি শোষিত হতে কিছুটা সময় লাগে। এই সময় যদি ভুল অভ্যাসে লিপ্ত হই, তবে হজমের সমস্যা, অ্যাসিডিটি, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তাই খাওয়ার পরপরই কিছু অভ্যাস এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি। চলুন, জেনে নেওয়া যাক—
খাবারের পর যেসব অভ্যাস এড়ানো জরুরি

অনেকেই অভ্যাসবশত খাবারের সঙ্গে সঙ্গেই ফল খেয়ে ফেলেন। কিন্তু এটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। খাবারের পর পাকস্থলীতে প্রধান খাবার হজম হতে থাকে, আর তখন ফল পাকস্থলীতে আটকে যায় এবং অন্ত্রে পৌঁছাতে দেরি হয়। এর ফলে খাবার ফারমেন্টেশন শুরু হয়ে গ্যাস, অস্বস্তি ও পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পরে বা খাওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ফল খাওয়া উচিত। সকালে খালি পেটে টাটকা ফল খাওয়া সবচেয়ে উপকারী।
খাওয়ার পর চা নয়
খাওয়ার পরপরই অনেকের অভ্যাস থাকে এক কাপ চা খাওয়ার। কিন্তু চায়ের পাতায় উপস্থিত ট্যানিন ও উচ্চ অম্লতা খাবারের প্রোটিন হজমে বাধা দেয়। এর ফলে বদহজম, অ্যাসিডিটি এমনকি আয়রন শোষণেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার পরপর চা পান করলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি তৈরি হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাওয়ার অন্তত ১-২ ঘণ্টা পর চা পান করাই ভালো।
খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গোসল নয়

খাওয়ার পর গোসল করলে শরীরের রক্তপ্রবাহ হজমতন্ত্র থেকে সরে গিয়ে ত্বক ও শরীরের অন্যান্য অংশে সক্রিয় হয়। এর ফলে পাকস্থলীতে রক্তপ্রবাহ কমে যায় এবং খাবার হজমে সমস্যা হয়। বিশেষ করে যাদের হজমশক্তি দুর্বল বা অ্যাসিডিটির সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি আরও বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। তাই খাওয়ার অন্তত ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর গোসল করা উচিত।
খাওয়ার পরপরই হাঁটা নয়
অনেকে মনে করেন, খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটলে খাবার দ্রুত হজম হয়। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটা ঘটে। খাওয়ার পরপরই হাঁটলে শরীরের শক্তি হজমে ব্যবহার না হয়ে পেশির কাজে ব্যয় হয়। এর ফলে খাবার যথাযথভাবে হজম হতে পারে না এবং বদহজম, গ্যাস ও পেট ব্যথার সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে খাওয়ার ১৫-২০ মিনিট পর হালকা হাঁটা উপকারী হতে পারে। এতে রক্তসঞ্চালন ভালো হয় ও হজম প্রক্রিয়াও সহজ হয়।
খাওয়ার পর শরীরের খাবার হজম হতে সময় লাগে। যদি খাওয়ার পরপরই ঘুমিয়ে পড়েন, তবে খাবার সম্পূর্ণ হজম হয় না। এতে গ্যাস, বদহজম, বুকজ্বালা এমনকি এসিড রিফ্লাক্সের সমস্যা হতে পারে। দীর্ঘদিন এ অভ্যাস চলতে থাকলে হজমতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই খাওয়ার অন্তত ১ থেকে ২ ঘণ্টা পর ঘুমানো উচিত। রাতে শোয়ার আগে হালকা হাঁটাচলা করলে হজম আরও ভালো হয়।
ধূমপান একেবারেই নয়

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর—এ কথা সবাই জানে। তবে খাওয়ার পর ধূমপান করলে এর ক্ষতি বহুগুণে বেড়ে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, খাওয়ার পর একটি সিগারেট মানে প্রায় ১০টি সিগারেটের সমান ক্ষতি। খাওয়ার পর পাকস্থলীর কার্যক্রম সক্রিয় থাকে, তখন ধূমপান করলে শরীরে নিকোটিন ও অন্যান্য ক্ষতিকর পদার্থ আরও দ্রুত শোষিত হয়। এর ফলে ক্যান্সার, ফুসফুসের জটিলতা ও হার্টের রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।
আঁটসাঁট পোশাক এড়িয়ে চলুন
খাওয়ার পরপরই টাইট বা আঁটসাঁট পোশাক পরলে পাকস্থলীতে চাপ পড়ে। এতে খাবার ঠিকভাবে হজম হতে পারে না এবং বুকজ্বালা, গ্যাস, অ্যাসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই খাওয়ার পর ঢিলেঢালা আরামদায়ক পোশাক পরাই ভালো। বিশেষ করে রাতে খাবারের পর টাইট জামা-প্যান্ট বা বেল্ট বাঁধা এড়িয়ে চলা উচিত।
শেষ কথা
সুস্থ ও হজমযোগ্য জীবনযাপনের জন্য শুধু কী খাচ্ছেন তা নয়, খাওয়ার পর কী করছেন সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। খাওয়ার পর ফল খাওয়া, চা পান, গোসল, সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা বা ঘুমানো, ধূমপান কিংবা টাইট পোশাক পরা—এসব অভ্যাস শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা জরুরি। খাবারের পর সঠিক অভ্যাস গড়ে তুললে হজম হবে ভালো, শরীর থাকবে হালকা ও সুস্থ, আর জীবন হবে অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও আনন্দময়।
সুস্থ ও হজমযোগ্য জীবনযাপনের জন্য শুধু কী খাচ্ছেন তা নয়, খাওয়ার পর কী করছেন—সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। উপরের অভ্যাসগুলো থাকলে এখনই বদলান, শরীর থাকবে হালকা, হজম ভালো আর জীবন হবে আরো আনন্দময়।

