নিম পাতা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। নিম পাতা আমাদের চারপাশে সহজলভ্য একটি ভেষজ উদ্ভিদ। গ্রামবাংলায় প্রতিটি বাড়ির উঠোনে কিংবা রাস্তার ধারে বিশাল আকৃতির নিম পাতা গাছ প্রায়ই দেখা যায়। ছোটবেলা থেকে আমরা শুনে এসেছি, নিম পাতা তিতা স্বাদ যেমন, এর উপকারিতাও ততটাই বেশি।
প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রে নিমকে ‘ঔষধি গাছের সেরা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাতেও প্রমাণ মিলেছে, নিয়মিত নিম পাতা খাওয়ার মাধ্যমে শরীর অনেক রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে। বিশেষ করে খালি পেটে নিম পাতা চিবিয়ে খেলে শরীরের ভেতরকার নানা জটিল সমস্যার সমাধান হয়।
নিম পাতা হজমশক্তি ও পেটের সমস্যা দূর করে

আয়ুর্বেদের মতে, নিম পাতায় আছে শক্তিশালী অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান। খালি পেটে ৩-৪টি কচি নিম পাতা চিবিয়ে খেলে হজমশক্তি উন্নত হয় এবং পেটের নানা সমস্যা কমে। গ্যাস, অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্য কিংবা পেট ফাঁপার মতো সমস্যায় নিম অত্যন্ত কার্যকর। এর ভেষজ গুণাগুণ হজমতন্ত্রকে পরিষ্কার রাখে এবং পাকস্থলীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
নিম পাতা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিম পাতা খুব উপকারী। এতে ফ্ল্যাভোনয়েড, গ্লাইকোসাইড, টারপেনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের মতো যৌগ রয়েছে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিম পাতার রস শরীরের কোষগুলোকে ইনসুলিনের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা ভারসাম্যপূর্ণ থাকে এবং ডায়াবেটিস জটিলতা কমে যায়।
নিম পাতা রক্ত পরিষ্কার ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা করে
নিমকে স্বাভাবিকভাবে শরীরের প্রাকৃতিক ডিটক্সিফায়ার বলা হয়। নিয়মিত খালি পেটে নিম পাতা খেলে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর টক্সিন দূর হয়ে যায়। এর ফলে ত্বক ভেতর থেকে সুস্থ হয়, উজ্জ্বলতা বাড়ে এবং ব্রণসহ বিভিন্ন ত্বকের সমস্যা দূর হয়। যাদের নিয়মিত ব্রণের সমস্যা রয়েছে তারা দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাসে নিম পাতা যুক্ত করলে উপকার পাবেন।
নিম পাতা লিভার সুস্থ রাখে

লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়। খালি পেটে নিম পাতা খাওয়ার মাধ্যমে লিভার ডিটক্স হয় এবং এর কার্যক্ষমতা বাড়ে। পাশাপাশি এটি বিপাকক্রিয়া উন্নত করে, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ ও হজমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফলে শরীর থাকে হালকা ও কর্মক্ষম।
নিম পাতা দাঁত ও মুখগহ্বরের যত্নে
নিম প্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। খালি পেটে নিম পাতা চিবিয়ে খেলে দাঁতের গর্ত, মাড়ির প্রদাহ ও মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়। এতে থাকা জীবাণুনাশক উপাদান মুখগহ্বরকে জীবাণুমুক্ত রাখে, দাঁতকে মজবুত করে এবং মাড়িকে সুস্থ রাখে। এজন্য গ্রামীণ সমাজে অনেকেই এখনও নিম ডাল ব্যবহার করে দাঁত মাজেন।
নিম পাতা সর্দি-কাশি প্রতিরোধে
যাদের সর্দি-কাশির সমস্যা ঘন ঘন হয়, তাদের জন্যও নিম পাতা কার্যকর। নিম পাতা বেটে তার রস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে খেলে সর্দি প্রশমিত হয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এর অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য শ্বাসনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে।
নিম পাতা খুশকি ও চুলের যত্নে

শুধু খাওয়ার জন্য নয়, নিম পাতার পানি চুলের যত্নেও সমান উপকারী। খুশকির সমস্যা দূর করতে নিমপাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন। এতে মাথার ত্বক পরিষ্কার হয়, খুশকি কমে এবং চুলের গোড়া শক্তিশালী হয়।
সতর্কতা
যদিও নিম পাতা অত্যন্ত উপকারী, তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়। বিশেষ করে যাদের রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ওষুধ চলছে, তাদের ক্ষেত্রে নিম পাতা নিয়মিত খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
সব মিলিয়ে বলা যায়, নিম পাতা হলো প্রকৃতির অমূল্য ভেষজ দান। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটি কচি নিম পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীর ভেতর থেকে সুস্থ থাকে, ত্বক ও দাঁত মজবুত হয় এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।