উত্তর ক্যারিবীয় অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালানোর পর গতি বাড়িয়ে বারমুডার দিকে অগ্রসর হচ্ছে হারিকেন ‘মেলিসা’। ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে অন্তত ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জ্যামাইকা ও হাইতির সরকারি প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর মধ্যে জ্যামাইকাতে ১৯ মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী। কর্তৃপক্ষ এখনো অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। ঝড় দেশটির লাখ লাখ লোককে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রেখে গেছে, অসংখ্য ভবনের ছাদ উড়িয়ে নিয়েছে, মাঠগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ধ্বংসস্তূপ।
হাইতিতে আগের দিনই মেলিসার প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টি ও বন্যায় ২৫ মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার দেশটির কর্তৃপক্ষ আরও ৫ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে, ২০ জন এখনো নিখোঁজ।
অনুসন্ধান ও উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করতে জ্যামাইকার সামরিক বাহিনী তার রিজার্ভ সদস্যদের ডেকে পাঠিয়েছে। মেলিসা মঙ্গলবার দেশটির দক্ষিণপশ্চিমে ৫ মাত্রার শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হয়ে আঘাত হেনেছিল। এটি এখন পর্যন্ত জ্যামাইকার ইতিহাসে সরাসরি তীরে আঘাত হানা সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়। ১৯৮৮ সালের পর দেশটিতে মেলিসাই প্রথম বড় কোনো হারিকেন যা সরাসরি ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ল।
সবচেয়ে শক্তিশালী মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যে বাতাসের গতি থাকে, মেলিসার বাতাসের গতি ছিল তার বেশ ওপরে। ভূমিতে আঘাত হানার সময় বাতাসের গতি বিবেচনায় নিলে এটি রেকর্ড রাখা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আটলান্টিক মহাসাগর থেকে উদ্ভূত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হারিকেনের সঙ্গে যৌথ অবস্থানে থাকবে, বলছেন অ্যাকুওয়েদারের পূর্বাভাসবিদরা।
ঝড়টির কারণে এরই মধ্য পশ্চিম ক্যারিবীয় অঞ্চলের ক্ষয়ক্ষতি চার হাজার ৮০০ থেকে পাঁচ হাজার ২০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
হাইতিতে মেলিসা সরাসরি আঘাত না হানলেও শ্লথগতিতে অগ্রসর হওয়া ঝড়ের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে ভুগেছে। দেশটির বেশিরভাগ মৃত্যুই দেখেছে দক্ষিণের শহর পেটি-গাভ, সেখানে নদীর পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে।
নদী এক জায়গায় জাতীয় মহাসড়কের একটি অংশ ভেঙে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম লু নুভেলিস্ত। নিকটবর্তী শহর জ্যাকমেলকে সংযোগ রক্ষা করা এই সড়কটি গত বছরের ঘূর্ণিঝড় বেরিলের কারণে আগে থেকেই বেশ নাজুক অবস্থায় ছিল।
মেলিসা ৩ মাত্রার শক্তি নিয়ে কিউবার পূর্বাঞ্চলেও আঘাত হেনেছিল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানকার সরকার আগেই প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে ঘূর্ণিঝড়ে কোনো মৃত্যুর খবর না মিললেও মেলিসা সেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে মেলিসা ছিল ১ মাত্রার ঝড়, অবস্থান করছিল নর্থ আটলান্টিক ব্রিটিশ দ্বীপ অঞ্চল থেকে ৪০৯ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে। বাতাসের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১৬৯ কিলোমিটার। রাত ১১টায় মেলিসা শক্তি বাড়িয়ে ২ মাত্রার ঝড়ে পরিণত হয়।
বারমুডার দিকে এগুলেও এটি খানিকটা দূর দিয়ে বয়ে যাবে বলে পূর্বাভাসে ধারণা মেলায় দ্বীপটির বাসিন্দারা আপাত স্বস্তিতে রয়েছে। তবে এরপরও কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার রাতে তাদের উঁচু সংযোগ সড়ক বন্ধ রাখে। সাবধানতার অংশ হিসেবে শুক্রবার স্কুল ও ফেরিও বন্ধ রাখা হয়েছে।
বুধবার রাতে ঝড়টি বাহামাস দ্বীপপুঞ্জে আঘাত হেনেছিল, সেখানকার কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার কিছু সতর্কবার্তা প্রত্যাহার করে নিলেও বাসিন্দাদের এখনো সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছে। যাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তাদেরকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেওয়া হবে কিনা, শনিবার কর্তৃপক্ষ সে সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা।

 
          
 প্রিন্ট করুন
                                প্রিন্ট করুন
                             
                    
 
  
  
 