গাজা শহরে ইসরাইলি সেনাদের ব্যবহৃত নতুন এক মারণাস্ত্র নিয়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা একে বলছে ‘বুবি-ট্র্যাপ রোবট’— পুরোনো সামরিক যানকে বিস্ফোরকে ভরে রিমোট কন্ট্রোলে চালানো হয়, যা আবাসিক এলাকায় রেখে মুহূর্তের মধ্যে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব বিমান হামলার চেয়েও ভয়ঙ্কর।
গাজার বাসিন্দা এক বাসিন্দা বলেন, পুরনো ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া যান বিস্ফোরকে ভরে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। কয়েক মিনিট পরেই বিস্ফোরণ ঘটে, আকাশ রক্তবর্ণ হয়ে যায়। আশপাশে কেউ থাকলে তাদের কোনো চিহ্নই আর খুঁজে পাওয়া যায় না।
গাজার এ বাসিন্দা আরও বলেন, এসব বিস্ফোরণে অনেক সময় সম্পূর্ণ ভবন মাটির সঙ্গে মিশে যায়।
স্থানীয় আরও তিন বাসিন্দা জানায়, প্রতিটি বিস্ফোরণ ৩০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার এলাকা ধ্বংস করে দেয়। বহু পরিবার তাদের ঘরের ভেতরেই চাপা পড়ে গেছে। আল-জায়তুন, শেখ রাদওয়ান ও জাবালিয়ার মতো এলাকায় এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে মানুষ আটকা রয়েছে।
হামাস পরিচালিত সরকারি মিডিয়া অফিস জানায়, গত ১৩ আগস্ট থেকে ইসরাইলি সেনারা গাজার ভেতরে স্থল অভিযান চালাচ্ছে। ওই সময় থেকে অন্তত ১ হাজার ১০০ জন নিহত এবং ছয় হাজারের বেশি আহত হয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিমান হামলার পাশাপাশি এখন পর্যন্ত এক’শো এর বেশি বিস্ফোরক রোবট ব্যবহৃত হয়েছে, যার ফলে ব্যাপক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে।
ইসরাইলি গণমাধ্যম বলছে, এই রোবটের বিস্ফোরণ এতটাই শক্তিশালী যে ৭০ কিলোমিটার দূরে তেল আবিবেও তা অনুভূত হয়।
গাজার আরেক বাসিন্দা নিদাল ফাওজি প্রশ্ন তোলেন, ইসরাইল কি গাজাকে নতুন অস্ত্র পরীক্ষার ক্ষেত্র বানিয়েছে? রাতের বেলা আমি দেখেছি, সামরিক যান টেনে নিয়ে এসে দেয়ালের পাশে রেখে যায়। আমরা পালিয়ে যেতেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়। ১০০ মিটার দূর থেকেও মানুষ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অধ্যাপক হানি আল-বাসৌস বলেন, ইসরাইল সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে ও সেনাদের হতাহত কমাতে এই বিস্ফোরক রোবট ব্যবহার করছে। এগুলোতে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক বহন করা হয়, যা টানেল, বহুতল ভবন ও আবাসিক ব্লক ধ্বংসে ব্যবহৃত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. মুনির আল-বুরশ দাবি করেন, প্রতিটি রোবট সাত টন পর্যন্ত বিস্ফোরক বহন করতে পারে। প্রতিদিন সাত থেকে দশটি বিস্ফোরণ ঘটছে, যা জনবহুল পশ্চিম গাজায় ভয়াবহ বাস্তুচ্যুতি তৈরি করছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, এই রোবটের অব্যাহত ব্যবহার গণহত্যা এবং আবাসিক অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংসের ঝুঁকি তৈরি করছে। অবরোধের কারণে উদ্ধার ও ত্রাণ সক্ষমতা না থাকায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।