যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি মুক্তির চুক্তি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে তার নিবিড় আলোচনা চলছে। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসও এসব আলোচনার ব্যাপারে অবহিত রয়েছে বলে জানান তিনি।
ট্রাম্পের দাবি, এই আলোচনা যতদিন প্রয়োজন ততদিন চলবে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরাইল।
এই সপ্তাহে একাধিক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতা ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, ‘গাজা প্রসঙ্গে আমরা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে অত্যন্ত অনুপ্রেরণামূলক ও ফলপ্রসূ আলোচনা করছি বলে জানাতে পেরে আনন্দিত।’
তিনি যোগ করেন, ‘চার দিন ধরে টানা তীব্র আলোচনা চলছে এবং সফল চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে। এ অঞ্চলের সব দেশ এতে জড়িত, হামাস আলোচনার বিষয়ে অবগত এবং ইসরাইলকেও সব স্তরে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী ‘বিবি’ নেতানিয়াহুকেও জানানো হয়েছে।’
ট্রাম্প বলেন, ‘দশকের পর দশক পর এবার একটি চুক্তি সম্পাদনের জন্য যে পরিমাণ সদিচ্ছা ও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তা আমি আগে কখনও দেখিনি। সবাই এই মৃত্যু ও অন্ধকারের সময়কে পেছনে ফেলে আসতে চায়। এই আলোচনার অংশ হতে পারা আমার জন্য গর্বের। আমাদের অবশ্যই বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে হবে এবং স্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, যুদ্ধ শেষ করা ও বন্দিদের মুক্ত করার জন্য একটি চুক্তি ‘খুব কাছাকাছি’। হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে তিনি একাধিকবার এমন পূর্বাভাস দিয়েছেন।
নিউইয়র্কে রাইডার কাপ গলফ টুর্নামেন্টে যোগ দিতে যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে আমরা গাজা ইস্যুতে চুক্তির খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। চুক্তি হবে, আর তাতে যুদ্ধ শেষ হবে, বন্দিরা মুক্তি পাবে, শান্তি আসবে।’
ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, সোমবার ওয়াশিংটনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পরই এই চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে।
এর আগে মঙ্গলবার আরব ও মুসলিম নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পরিকল্পনা তুলে ধরেন। এতে যুদ্ধ বন্ধ, বন্দি মুক্তি এবং গাজা প্রশাসনের জন্য হামাসবিহীন একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসন কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়।

আরব ও মুসলিম নেতারা প্রস্তাবটি স্বাগত জানালেও এখনো প্রকাশ্যে সমর্থন জানায়নি ইসরাইল ও হামাস।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে শুক্রবার নেতানিয়াহু তার ভাষণে বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে চালানো হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের ইসরাইলি লক্ষ্য পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চলবে। এতে স্পষ্ট হয় যে তিনি এখনও ট্রাম্পের পরিকল্পনা মেনে নিতে প্রস্তুত নন। ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আছেন নেতানিয়াহু।
চ্যানেল ১৩ নিউজের খবরে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের ধৈর্য শেষের দিকে পৌঁছেছে। গাজা যুদ্ধ শেষ করার লক্ষ্যে বন্দি মুক্তির চুক্তিতে ইসরাইলকে সমর্থন দিতে জোর চাপ দেওয়া হচ্ছে।
কান পাবলিক ব্রডকাস্টার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনার নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট মনে করেন যুদ্ধ শেষ করার সময় এসে গেছে।’ তারা যোগ করেন, ‘বিবি, সময় এসে গেছে।’
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন পরিকল্পনার বেশ কয়েকটি ধারা নিয়ে নেতানিয়াহুর তীব্র আপত্তি রয়েছে। তিনি ও কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডেরমার উইটকফ ও কুশনারকে এ আপত্তির কথা জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠরা বলেন, ‘যে কোনো প্রস্তাবে হামাসের সম্পূর্ণ পতন নিশ্চিত থাকতে হবে। আমরা এ বিষয়ে আপস করব না।’
এর আগে চ্যানেল ১২ নিউজ জানায়, পরিকল্পনার কয়েকটি অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু উদ্বিগ্ন।
উল্লেখ্য, ট্রাম্পের ২০২০ সালের ‘ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি’ ও আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জ্যারেড কুশনার এবারও এই কাঠামো তৈরিতে সক্রিয় ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার।
হোয়াইট হাউসের প্রস্তাবের ভিত্তি মূলত ব্লেয়ারের পরিকল্পনা। গত সপ্তাহে টাইমস অব ইসরাইল এ উদ্যোগের খসড়া প্রকাশ করে। এতে গাজা শাসনের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা পরবর্তীতে সংস্কারকৃত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।