চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং জুন বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিশ্বের বিভক্তির আশঙ্কা তুলে ধরে বৈশ্বিক ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সতর্ক করে বলেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গন যেন ‘জঙ্গলের আইন’-এ সংজ্ঞায়িত এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে না গিয়ে সংলাপ ও সহযোগিতার পথে এগোয়।
বেইজিংয়ে শুরু হওয়া তিন দিনের শিয়াংশান নিরাপত্তা ফোরামের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডং বলেন, বিশ্ব বর্তমানে স্নায়ুযুদ্ধের মানসিকতা, আধিপত্যবাদ ও সুরক্ষাবাদের ছায়ায় আবদ্ধ। তিনি বলেন, বাহ্যিক সামরিক হস্তক্ষেপ, প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা এবং অন্যদের জোর করে পক্ষ নেওয়াতে বাধ্য করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেবে।
তিনি আরও বলেন, সামরিক শক্তিতে পরম শ্রেষ্ঠত্বের মোহ ও ‘বলয় ন্যায়’ নীতি বিশ্বকে বিভক্ত করে ফেলবে এবং জঙ্গলের আইনে নিয়ন্ত্রিত এক অগোছালো পরিস্থিতি তৈরি করবে। তবে শক্তিশালী চীনা সেনাবাহিনী শান্তির পক্ষে শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন ডং।
এ বক্তব্যে একাধিক পরোক্ষ ইঙ্গিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি, যা গত বছরের চেয়ে এবার আরও কড়া সুরে উপস্থাপিত হয়েছে।
ডং-এর এই ভাষণ আসে এমন এক সময়ে, যখন সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও আধিপত্যবাদ ও শক্তির রাজনীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। চলতি মাসেই বেইজিংয়ে এক বৃহৎ সামরিক কুচকাওয়াজে নতুন অস্ত্রসম্ভারও প্রদর্শন করেছে চীন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, চীন আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা রক্ষায় অবদান রাখতে প্রস্তুত। তবে তাইওয়ান প্রশ্নে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কখনোই বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রচেষ্টা সফল হতে দেবে না। তার ভাষায়, তাইওয়ানের চীনে প্রত্যাবর্তন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাহ্যিক সামরিক হস্তক্ষেপ মোকাবিলায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত।
চীন তাইওয়ানকে নিজের ভূখণ্ড দাবি করে আসছে এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও কখনো অস্বীকার করেনি। অন্যদিকে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে ও তার সরকার চীনের সার্বভৌমত্ব দাবি প্রত্যাখ্যান করে জানিয়েছেন, দ্বীপটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার একমাত্র তাইওয়ানের জনগণের।
চীনা সরকারি সংবাদমাধ্যম শিনহুয়ার তথ্য অনুযায়ী, এবারের শিয়াংশান নিরাপত্তা ফোরামে প্রায় ১০০ দেশের ১,৮০০ প্রতিনিধি- যার মধ্যে আছেন সরকারি কর্মকর্তা, সামরিক সদস্য ও গবেষকরা- অংশ নিচ্ছেন। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর বেশিরভাগই নিম্নপর্যায়ের কূটনৈতিক প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এর মধ্য দিয়ে তারা চীনের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতৃত্ব কাঠামো সম্পর্কে আরও ঘনিষ্ঠ ধারণা নিতে চান।