ভয়াবহ ভূমিকম্পের মধ্যেই আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে পাকিস্তান। ভূমিকম্পের কারণে জাতিসংঘ গণহারে বিতাড়ন স্থগিত করার আহ্বান জানালেও তা শুনছে না। সময়সীমা শেষ হওয়ার অজুহাতে বিতাড়ন জোরদার করেছে দেশটি।
টোলো নিউজ জানিয়েছে, গত কয়েকদিনে পাকিস্তান থেকে আফগান অভিবাসীদের জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনা বেড়েছে। শরণার্থীদের আফগানিস্তানে ফেরত যাওয়ার জন্য ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল পাকিস্তান। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার পর থেকেই বিতাড়ানের হার তীব্র হয়েছে।
স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিন হাজার হাজার পরিবারকে তোরখাম ক্রসিং দিয়ে আফগানিস্তানে নির্বাসিত করা হচ্ছে।
পাঞ্জাব প্রদেশের রাওয়ালপিন্ডিতে একটি হোটেলের মালিক হাবিবুল্লাহ কয়েক দশক ধরে বসবাসের পর এখন সব সম্পত্তি এবং ব্যবসা হারিয়েছেন। পরিবারসহ তাকে জোরপূর্বক নির্বাসিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমার নিজস্ব হোটেল এবং ব্যবসা ছিল, কিন্তু পরিস্থিতি এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যেখানে মর্যাদার প্রশ্ন হয়ে ওঠে এবং আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলি। হোটেল এবং ব্যবসা দুটিই শেষ হয়ে গেছে। আমাদের কিছু জিনিসপত্র আনতে পেরেছি, কিন্তু অনেক কিছুই রয়ে গেছে। সম্মানটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেটি নিয়েই ফিরে এসেছি।
বর্তমানে, পাকিস্তানে আফগানদের জীবনযাত্রা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে।
সম্প্রতি ফিরে আসা অন্যান্য অভিবাসীরাও হঠাৎ পুলিশি অভিযান, চাঁদাবাজি এবং জোরপূর্বক আটকের কথা জানিয়েছেন।
নির্বাসিতদের একজন খালিদ বলেন, কখনও কখনও তারা আমাদের আটকে রাখত, আবার কখনও টাকা দাবি করত। আমরা রাস্তায় বা বাজারে যেতে পারতাম না। তারা আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছিল।
আরেক নির্বাসিত উমর গুল বলেন, তারা আমাদের অনেক জোর করেছে। আমরা সেখানে ৪৫ বছর ধরে বসবাস করেছি, কিন্তু আমরা কখনোই সত্যিকার অর্থে জীবন উপভোগ করতে পারিনি।
নাঙ্গারহারের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে পাকিস্তান থেকে আফগান অভিবাসীদের বহিষ্কারের ঘটনা অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে।
তোরখামের অভিবাসী প্রত্যাবাসন প্রধান বখত জামাল গওহর বলেন: ইসলামিক আমিরাতের সহায়তা পাওয়ার পর, প্রত্যাবর্তিতদের অংশীদার সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে আফগানিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে স্থানান্তর করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে, পশতুন জাতীয়তাবাদী দলগুলো এবং সাবেক পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আফগানদের জোরপূর্বক বিতাড়ন বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার আরও দ্রুত গতিতে প্রক্রিয়াটি চালিয়ে যাচ্ছে।
পাকিস্তান গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সোভিয়েত আক্রমণ থেকে শুরু করে ২০২১ সালের তালেবান ক্ষমতা দখল পর্যন্ত আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জঙ্গি হামলা ও সীমান্তে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির অভিযোগ তুলে ইসলামাবাদ ২০২৩ সালে শরণার্থীদের বহিষ্কারে অভিযান শুরু করে।
জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ইতিমধ্যে ১২ লাখেরও বেশি আফগানকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, এর মধ্যে চলতি বছরেই চার লাখ ৪৩ হাজারের বেশি।