গাজায় আটক বন্দিদের পরিবার সোমবার নরওয়ের নোবেল কমিটিকে আহ্বান জানিয়েছে, তাদের প্রিয়জনদের মুক্তির প্রচেষ্টার স্বীকৃতি হিসেবে চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হোক।
মঙ্গলবার (৭ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য টাইমস অব ইসরাইল।
মিশরে ট্রাম্পের প্রস্তাবের ভিত্তিতে গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু হওয়ার দিনে ‘হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরাম’—যা ইসরাইলের অধিকাংশ বন্দি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করে—এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা নোবেল কমিটিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে যাতে ট্রাম্পের নামকে শুক্রবারের পুরস্কার ঘোষণায় অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে ফোরামটি বলেছে, ‘এই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সার্বিক পরিকল্পনাটি আলোচনার টেবিলে রয়েছে—যা অবশিষ্ট সব বন্দিকে মুক্ত করে এই ভয়াবহ যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পারে। বহু মাস পর প্রথমবার আমরা আশাবাদী হয়েছি যে আমাদের দুঃস্বপ্নের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে।’
তারা আরও লেখে, ‘আমরা নিশ্চিত যে শেষ বন্দিকে ঘরে ফেরানো, যুদ্ধের ইতি টানা এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নেবেন না’।
ফোরামটি জানায়, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই (ট্রাম্প) আমাদের অন্ধকার সময়ে আলো এনে দিয়েছেন। জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে জীবিত ও মৃত বহু বন্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ’।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গত এক বছরে বিশ্বজুড়ে শান্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে বেশি অবদান আর কেউ রাখেননি। অনেকে শান্তি নিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু তিনিই সেটি বাস্তবে অর্জন করেছেন। তাই আমরা দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানাচ্ছি—প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত করা হোক, কারণ তিনি শেষ বন্দি ঘরে না ফেরা পর্যন্ত বিশ্রাম নেবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন’।
তবে ফোরামের পাঠানো চিঠিটি আনুষ্ঠানিক মনোনয়ন হিসেবে গণ্য হবে না, কারণ এই সংগঠনটি নোবেল পুরস্কারের যোগ্য মনোনয়নদাতাদের তালিকায় নেই। মনোনয়ন দিতে পারেন জাতীয় সরকারগুলোর সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পূর্বের পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।
গত জুলাইয়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছিলেন, গত মাসের ১২ দিনের ইসরাইল–ইরান যুদ্ধের অবসান ও ২০২০ সালের ‘আব্রাহাম চুক্তি’—যার মাধ্যমে ইসরাইল চারটি আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে—এই দুই উদ্যোগের জন্য। তবে সেই মনোনয়ন ২০২৬ সালের পুরস্কারের জন্য প্রযোজ্য হবে, কারণ ২০২৫ সালের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়েছে ৩১ জানুয়ারি।
যুক্তরাষ্ট্র–ইসরাইল সম্পর্কবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কবি বারদা জানিয়েছেন, মার্কিন-ইসরাইলি আইন বিশেষজ্ঞ ও ওহাইওর কেইস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনাত অ্যালন-বেক ২৮ জানুয়ারির এক চিঠিতে ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে মনোনয়ন দেন।
২০১৮ সাল থেকে ট্রাম্পকে একাধিকবার যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিক ও বিদেশি নেতারা নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দিয়েছেন। কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, গাজা যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নে ট্রাম্পের তৎপরতা আংশিকভাবে এই বছরের পুরস্কার প্রাপ্তির সম্ভাবনা জোরদার করতেই হতে পারে।
বর্তমানে হামাস ও গাজায় সক্রিয় অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর হাতে ৪৮ জন বন্দি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জন ছিলেন গত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-নেতৃত্বাধীন হামলায় অপহৃত ২৫১ জনের মধ্যে। তাদের মধ্যে অন্তত ২৬ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। ২০ জন জীবিত আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে, আর দুজনের অবস্থা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইসরাইলি কর্মকর্তারা। গাজায় হামাসের কাছে এখনো রয়েছে ২০১৪ সালে নিহত এক আইডিএফ সেনার মৃতদেহও।