বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থগিতের মামলায় ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার দেবে ইউটিউব

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায়ের করা একটি মামলা সমাধানে ইউটিউব ২৪.৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অ্যাকাউন্টটি স্থগিত করে দেওয়ায় ইউটিউবের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

সমাধানের অংশ হিসেবে, গুগলের প্যারেন্ট কোম্পানি অ্যালফাবেটের মালিকানাধীন ইউটিউব ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ২২ মিলিয়ন ডলার ন্যাশনাল মল ট্রাস্ট-কে দান করবে। এটি একটি অলাভজনক সংস্থা, যা হোয়াইট হাউসে একটি বলরুম নির্মাণের জন্য ২০০ মিলিয়ন ডলারের প্রকল্প তত্ত্বাবধান করছে। সোমবার একটি আদালতের নথিতে এটি দেখানো হয়েছে।

মামলার বাকী ২.৫ মিলিয়ন ডলার অন্যান্য বাদীদের মধ্যে যাবে, যার মধ্যে রয়েছে আমেরিকান কনজারভেটিভ ইউনিয়ন এবং আমেরিকান লেখিকা নাওমি উলফ, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএস জেলা আদালতে দাখিল করা নথি অনুযায়ী।

এছাড়াও, আদালতের নথি অনুযায়ী, ইউটিউব কোনো অপরাধ স্বীকার করেনি। এই সমঝোতা শুধু বিতর্কিত দাবি সমাধান এবং আরও বিচারব্যয়ের ঝুঁকি এড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

এই অর্থ প্রদান ইউটিউবের জন্য তুলনামূলকভাবে বেশ অল্পই। কারণ শুধু ২০২৫ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে তাদের বিজ্ঞাপন আয় প্রায় ৯.৮ বিলিয়ন ডলার ছিল।

এই বছরের শুরুতে মেটা প্ল্যাটফর্ম এবং এক্স একই ধরনের বহু-মিলিয়ন ডলারের সমঝোতার পরে এই নিষ্পত্তি করা হয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছিলেন ৬ জানুয়ারি হামলার পরে তাকে অন্যায়ভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে সেন্সরড করা হয়েছে। ২০২০ সালে নির্বাচনে ট্রাম্প ‘জালিয়াতির’ অভিযোগ করলে তার সমর্থকরা সেদিন এ হামলা চালায়।

তিন মামলার মামলাকারী এবং ট্রাম্পের সহযোগী জন পি. কোয়েল এ বিষয়ে বলেন, তিনি এই সমাধান নিয়ে সন্তুষ্ট, এবং তিনি উল্লেখ করেন যে প্রেসিডেন্ট ও অন্যান্য বাদীরাও সন্তুষ্ট।

২০২০ সালের নির্বাচনের বিষয়ে ট্রাম্পের মিথ্যা দাবির কারণে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কায় তাকে প্ল্যাটফর্ম থেকে বাদ দেওয়ার পর, বিগ টেক কোম্পানিগুলো তার হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর তার প্রশাসনের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখার চেষ্টা করেছে।

এই মাসের শুরুর দিকে, গুগলের সুন্দর পিচাই, মেটার মার্ক জুকারবার্গ এবং অ্যাপলের টিম কুকসহ টেক সিইওরা হোয়াইট হাউসের একটি ডিনার ইভেন্টে ট্রাম্পের প্রশংসা করেন এবং তার প্রশাসনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উদ্যোগগুলোর প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন।

অন্যান্য মিডিয়া কোম্পানিরাও ট্রাম্পের আইনি দাবির সমাধানে বড় অঙ্কের অর্থ প্রদান করেছে।

গত জুলাইয়ে প্যারামাউন্ট গ্লোবাল জানিয়েছে, তারাও সমঝোতা করতে ১৬ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল, সিবিএস নিউজের ৬০ মিনিটস প্রোগ্রাম সাক্ষাৎকারটি প্রতারণামূলকভাবে সম্পাদন করেছে। সেই সাক্ষাৎকারটি তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে ছিল।

গত ডিসেম্বরে এবিসি নিউজ ট্রাম্পকে ১৫ মিলিয়ন ডলার দিতে সম্মত হয়েছিল। সেসময় এবিসি নিউজের অ্যাঙ্কর জর্জ স্টেফানোপোলোসের বিরুদ্ধে মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছিল।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশনসের পোস্টডক্টরাল গবেষক টিমোথি কোস্কি বলেছেন, ইউটিউবের এই সমঝোতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর কনটেন্ট মডারেশন নিয়ে ধারাবাহিকতার আশাকে আঘাত করেছে।

কোস্কি আল জাজিরাকে বলেন, নিয়মভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার অবনতি হওয়ায়, এই প্রশাসনের অনুকূলে থাকা যে কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়মমাফিক এবং ধারাবাহিক আচরণের আশা করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, এতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত বিশাল সংখ্যক কোম্পানিও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। সেন্সরশিপ সরানোর বদলে, এটি তা বিশেষভাবে এদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করার একটি পথ বাতলে দিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, উপরন্তু, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বজুড়ে অনেক সরকারের জন্য নজির স্থাপন করেছে।