ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে আমলকির উপকরিতা ব্যাপক। গুণের যেন শেষ নেই ছোট্ট ফল আমলকিতে। ভেষজ গুণে ভরপুর এ ফলটির ব্যবহার রয়েছে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা থেকে শুরু করে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে। ফল ও পাতা দুটিই সমানভাবে ওষুধরূপে ব্যবহৃত হয়। প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এই ফলটি সহজলভ্য এবং সারাবছরই পাওয়া যায় নাগালের মধ্যে।
গবেষণা বলছে, পেয়ারার চেয়ে তিন গুণ, কাগজি লেবুর চেয়ে দশ গুণ, কমলালেবুর চেয়ে ২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ, কলার চেয়ে ৬০ গুণ এবং আপেলের তুলনায় ১২০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে আমলকিতে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রদাহনাশক ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী গুণ শরীরের নানা জটিলতা দূর করতে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে আমলকি
হজমশক্তি উন্নত করে

আমলকি হজমের জন্য বিশেষ উপকারী।
- আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাইলসের সমস্যায় কার্যকর।
- পেটের গোলযোগ ও বদহজম প্রতিরোধে এটি দারুণ কাজ করে।
- খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার বা মোরব্বা খেলে হজমশক্তি বাড়ে।
- শুকনো আমলকি পানিতে ভিজিয়ে খেলে গ্যাস্ট্রিক ও অম্বলের সমস্যা কমে।
চোখ ও ত্বকের যত্নে

আমলকি শুধু হজমেই নয়, চোখ ও ত্বকের জন্যও সমান উপকারী।
- এতে থাকা ফাইটো-কেমিক্যালস চোখের প্রদাহ, চুলকানি ও পানিপড়া কমায়।
- বয়সজনিত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস প্রতিরোধে সহায়ক।
- প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে ত্বকের কালো দাগ দূর হয় ও ত্বক উজ্জ্বল হয়।
চুলের প্রাকৃতিক টনিক
চুলের পরিচর্যায় আমলকি প্রাচীনকাল থেকেই জনপ্রিয়।
- এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
- খুসকি কমায় ও আগেভাগে চুল পেকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
- আমলকি তেলের নিয়মিত ব্যবহার চুলকে করে ঘন ও মসৃণ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
- কাশি, সর্দি, ব্রঙ্কাইটিস ও হাঁপানি রোগে এটি উপকারী।
- মানসিক চাপ কমায়, অনিদ্রা দূর করতে সাহায্য করে।
- শরীর ঠাণ্ডা রাখে, পেশী মজবুত করে ও শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ প্রতিরোধে
আমলকির অন্যতম বড় গুণ হলো রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
- ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
- শরীরের অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।
- হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে তোলে।
- নিয়মিত আমলকি খেলে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ঝরে যায়, ফলে ওজনও নিয়ন্ত্রণে থাকে।
কীভাবে খাবেন
- আমলকির রস দুধ বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে দিনে দু’বার খেতে পারেন।
- আচার, মোরব্বা বা গুঁড়ো আকারে খাওয়া যায়।
- আমলকির গুঁড়ো মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেলে রুচি ও খিদে বাড়ে।
- সকালে খালি পেটে আমলকির রস পান করলে শরীর সতেজ থাকে।
শেষকথা
ছোট্ট এই ফলটি যেন প্রাকৃতিক এক অমূল্য ভাণ্ডার। ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে হজম, চোখ, ত্বক, চুল—প্রতিটি ক্ষেত্রে আমলকি সমান কার্যকর। নিয়মিত আমলকি খাওয়ার অভ্যাস শুধু ডায়াবেটিসই নিয়ন্ত্রণ করবে না, শরীরকে রাখবে সুস্থ, সবল ও সতেজ।

