বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

তীব্র গরমে দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ: গবেষণা

রবিবার, সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
তীব্র গরমে দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ: গবেষণা

বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে তীব্র গরমে দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে মানুষ। প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাপমাত্রা। বাড়তি এই গরম শুধু দৈনন্দিন জীবনকেই দুর্বিষহ করে তুলছে না, বরং মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে ভয়ংকর প্রভাব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অস্বাভাবিক গরম কেবল তাত্ক্ষণিক অসুস্থতা নয়, বরং মানুষের জৈবিক বয়স বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে দ্রুত বার্ধক্য ও নানা জটিল রোগের ঝুঁকি তৈরি করছে।

খ্যাতনামা বৈজ্ঞানিক জার্নাল নেচার ক্লাইমেট চেঞ্জে সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা তাইওয়ানের ২৫ হাজার প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর ১৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, হিটওয়েভ বা অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের সংস্পর্শে আসা মানুষের জৈবিক বয়স অস্বাভাবিকভাবে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তীব্র গরমে বাড়ছে বয়স

গবেষণার ফলাফলে দেখা যায়, টানা দুই বছরে মাত্র চার দিন অতিরিক্ত হিটওয়েভের মুখোমুখি হলে একজন মানুষের জৈবিক বয়স গড়ে প্রায় নয় দিন বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন যারা বাইরে শারীরিক শ্রমের কাজ করেন। যেমন- কৃষক, নির্মাণশ্রমিক বা দিনমজুরদের ক্ষেত্রে একই সময়ে তাদের জৈবিক বয়স গড়ে ৩৩ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ প্রসঙ্গে গবেষকরা বলেন, ‘‘তাপপ্রবাহের কারণে শরীরে নানা শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন ঘটে। কোষের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হয়, ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং শরীরের ভেতরের জৈবিক ঘড়ি (biological clock) অস্বাভাবিকভাবে এগিয়ে যায়।’’ ফলে মানুষ আগেভাগেই বুড়িয়ে যাচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে।

ডিএনএ ক্ষতি ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি

তীব্র গরমের প্রভাবে শুধু বয়সই বাড়ছে না, শরীরের ভেতরে শুরু হচ্ছে গভীর ক্ষয়ক্ষতি। গবেষকদের দাবি, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ডিএনএর গঠন নষ্ট হতে শুরু করে, যা শরীরের কোষগুলোর বিভাজন ও পুনর্গঠনে বড় ধরনের বাধা তৈরি করে। এর ফলে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ নানা দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

যদিও মানুষ ধীরে ধীরে গরমের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শিখছে, তবে এর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে পারছে না। একদিকে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, অন্যদিকে মানসিক চাপ বাড়ছে, যা মিলিয়ে মানুষের সামগ্রিক সুস্থতা হুমকির মুখে ফেলছে।

পেশাগত ঝুঁকি ও জীবনধারা

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন, রোদে কাজ করেন কিংবা যাদের আর্থসামাজিক চাপ বেশি—তাদের ওপর তীব্র গরমের প্রভাব আরও বেশি। বিশেষ করে কৃষক, দিনমজুর, রিকশাচালক, নির্মাণশ্রমিকরা সরাসরি সূর্যের তাপে কাজ করার কারণে দ্রুত বার্ধক্যে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।

এছাড়া, যাদের পেশাগত চাপ বেশি, পারিবারিক সুখ কম, যারা দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত বা মাদক গ্রহণ করেন, তাদেরও দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি। অর্থাৎ গরম ও জীবনধারার চাপ একসঙ্গে মিলে স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে।

গবেষকদের সতর্কবার্তা

গবেষকরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ‘‘তীব্র গরম এখন আর কেবল একটি সাময়িক অসুবিধা নয়। এটি মানুষের দ্রুত বার্ধক্য ও জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকির এক নীরব চালক।’’ তাই এ সমস্যা নিয়ে এখনই গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে।

তাদের মতে, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই আরও জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে নিজেকে গরম থেকে সুরক্ষিত রাখা জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করা, হালকা ও বাতাস চলাচল করে এমন পোশাক পরা, রোদে কাজের সময় বিরতি নেওয়া এবং সুষম খাদ্য গ্রহণ এই ক্ষতিকর প্রভাব কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করতে পারে।

শেষ কথা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবী ক্রমেই উষ্ণ হয়ে উঠছে। তীব্র গরমে শুধু অস্বস্তিই বাড়ছে না, মানুষের জৈবিক বয়স দ্রুত বাড়ছে, যা এক অর্থে ‘‘নিঃশব্দ বার্ধক্য’’ ডেকে আনছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরমকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। বরং এটি এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও ভয়ংকর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বে।