বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণগুলো কেমন? সতর্ক হবেন কখন

বুধবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
পাকস্থলীর ক্যান্সার

পাকস্থলীর ক্যান্সার বর্তমানে বিশ্বব্যাপী অন্যতম ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির একটি। চিকিৎসকদের মতে, এটি একটি নীরব ঘাতক রোগ, কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণত বিশেষ কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। ফলে অনেক সময় রোগীরা এটি অবহেলা করেন বা সাধারণ পেটের সমস্যার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন। অথচ সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগী সুস্থ জীবন ফিরে পেতে পারেন।

ক্যান্সারের সূচনা কিভাবে হয়

পাকস্থলীর ক্যান্সার মূলত পাকস্থলীর আস্তরণে অস্বাভাবিক কোষের অপ্রতিরোধ্য বৃদ্ধি থেকে শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই কোষগুলো টিউমারে রূপ নেয় এবং ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শুধু পেটের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে আশপাশের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

প্রাথমিক লক্ষণগুলো কেন বিভ্রান্তিকর

চিকিৎসকদের মতে, পাকস্থলীর ক্যান্সারের প্রথম দিকের লক্ষণগুলো সাধারণ বদহজম, গ্যাস বা হালকা গ্যাস্ট্রিক সমস্যার মতো মনে হতে পারে। এ কারণে রোগীরা সচরাচর গুরুত্ব দেন না। যেমন—পেটে হালকা ব্যথা, খাওয়ার পর ভারী লাগা বা মাঝে মাঝে অম্বল। এগুলোকে আমরা সাধারণ অসুস্থতা ভেবে অবহেলা করি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব উপসর্গ টিকে থাকলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

লক্ষণগুলো যেগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে

  • পেটে ক্রমাগত ব্যথা বা অস্বস্তি – খাওয়ার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়া এবং ধীরে ধীরে স্থায়ী হয়ে ওঠা।
  • ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া – কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ ওজন কমতে থাকলে সতর্ক হতে হবে।
  • বমি ও বমি বমি ভাব – বারবার বমি হওয়া বা বমিতে রক্ত আসা হলে তা গুরুতর সংকেত।
  • গ্যাস ও হজমে সমস্যা – খাবার হজমে অসুবিধা, অল্প খেয়েই পেট ভারী লাগা।
  • রক্তাক্ত মল বা মলের রঙ পরিবর্তন – মলে রক্ত দেখা গেলে কিংবা মল কালচে হয়ে গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরি।
  • অম্বল ও এসিডিটি – ক্রমাগত অম্বল, বুক জ্বালা বা অস্বস্তি থাকলে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
  • অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা – রক্তাল্পতা বা শরীরে হিমোগ্লোবিনের অভাবের কারণে রোগীরা সারাক্ষণ ক্লান্ত বোধ করতে পারেন।

কারা বেশি ঝুঁকিতে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৫০ বছরের পর এ ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি। তবে শুধু বয়সই নয়, কিছু জীবনধারাগত কারণও এর সঙ্গে যুক্ত—

  • দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান ও মদ্যপান
  • অতিরিক্ত লবণাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার অভ্যাস
  • পরিবারের কারো পাকস্থলীর ক্যান্সারের ইতিহাস
  • দীর্ঘমেয়াদি গ্যাস্ট্রিক বা হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি সংক্রমণ

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

যদি কেউ কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী অস্বাভাবিক বদহজম, পেটব্যথা, ক্ষুধামন্দা বা ওজন হ্রাসের মতো সমস্যায় ভোগেন, তবে দ্রুত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শে এন্ডোস্কোপি, বায়োপসি বা ইমেজিং টেস্টের মাধ্যমে ক্যান্সার দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব।

সময়মতো শনাক্তকরণ কেন জরুরি

পাকস্থলীর ক্যান্সার যত দ্রুত শনাক্ত করা যাবে, চিকিৎসার ফল তত ভালো হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক চিকিৎসা শুরু হলে অস্ত্রোপচার, কেমোথেরাপি বা অন্যান্য থেরাপির মাধ্যমে রোগী সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। দেরি করলে এটি শরীরের অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং চিকিৎসা জটিল হয়ে যায়।

প্রতিরোধের উপায়

  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা
  • তাজা ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া
  • অতিরিক্ত লবণাক্ত ও প্রক্রিয়াজাত খাবার পরিহার করা
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা

শেষ কথা

পাকস্থলীর ক্যান্সার এমন একটি রোগ যা প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারণ পেটের অসুখের মতো মনে হতে পারে। কিন্তু সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এটি প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য। তাই দীর্ঘস্থায়ী বদহজম, ক্ষুধামন্দা, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া কিংবা রক্তক্ষরণের মতো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই জীবন রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।