অনেকেরই পায়ের তালু জ্বালাপোড়া অনুভুত হয়ে থাকে। যা হতে পারে অনেক রোগের লক্ষণ। অনেকেরই পায়ের তালু জ্বালাপোড়া অনুভুত হয়ে থাকে। তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তা বেজায় কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। যার ফলে ঘুম কম হওয়া, শরীরে অস্বস্তি বোধও হয়ে থাকে। তবে পায়ে এ জাতীয় জ্বালা রোগের লক্ষণ হতে পারে। চিকিত্সা বিজ্ঞানের বিশ্বে এটি বার্নিং ফিট সিনড্রোম হিসাবে পরিচিত। পায়ে এই জ্বলন্ত সংবেদনটি রাতে আরও বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে।
পায়ের তালু হালকা জ্বালা বা ঝাঁঝালো অনুভূতি। অনেকে অনেক সময় এটিকে অবহেলা করে থাকে। তারা ধরে নেন, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা, হাঁটাহাঁটি বা অতিরিক্ত ক্লান্তির কারণে এমন হয়।
পায়ের তালু জ্বালাপোড়ায় হতে পারে যেসব রোগের লক্ষণ

কিন্তু চিকিৎসকদের মতে, যদি এই সমস্যা ঘন ঘন বা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে তা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে। বিশেষত যখন এর সঙ্গে ঝিমঝিম ভাব, অসাড়তা, ব্যথা বা হাঁটাচলায় সমস্যা দেখা দেয়, তখন অবশ্যই উপেক্ষা করা উচিত নয়। তবে পায়ের তলায় জ্বালাপোড়ার পেছনে কোন কোন কারণ থাকতে পারে, জেনে নিন আজকের প্রতিবেদনে—
ভিটামিনের ঘাটতি
শরীরে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি হলে নার্ভ ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে। এতে পায়ের তলায় জ্বালা, ঝিমঝিমভাব কিংবা অসাড়তা দেখা দিতে পারে।
শুধু বি-১২ নয়, বি-৫, ভিটামিন ডি এবং ই এর ঘাটতিও একইভাবে স্নায়ু ও পেশির সমস্যার কারণ হয়। প্রতিদিনের ডায়েটে ডিম, দুধ, মাছ, সবুজ শাকপাতা, বাদাম ইত্যাদি খাবার রাখলে এই ঘাটতি পূরণ করা যায়। প্রয়োজনে সাপ্লিমেন্ট খেতে পারেন।

স্নায়ুর ক্ষতি
ডায়াবেটিক রোগীরা দীর্ঘদিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারলে স্নায়ুর ক্ষতি হতে শুরু হয়।
যাকে ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথিও বলা হয়। এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে পায়ের তলায় জ্বালা, সুই ফোটানোর মতো ব্যথা, পা অসাড় হয়ে যাওয়া এবং ভারসাম্যহীনতা। এই সমস্যা বাড়তে দিলে হাঁটাচলা কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
ফাঙ্গাল সংক্রমণ
অতিরিক্ত ঘাম, আর্দ্রতা বা ভেজা পরিবেশে পায়ের তলায় ফাঙ্গাস জন্মাতে পারে। এটিকে অনেকেই ‘অ্যাথলিটস ফুট’ নামেও চেনেন।
এতে চুলকানি, জ্বালাপোড়া, পা ফাটা, ত্বক খসখসে হয়ে যাওয়া দেখা দেয়। সতর্কতার জন্য নিয়মিত পা শুকনা রাখা, পরিষ্কার মোজা ব্যবহার, অ্যান্টিফাঙ্গাল ক্রিম বা পাউডার কাজে লাগাতে পারেন।
রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা
যাদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করতে হয় বা সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করেন না, তাদের পায়ের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। ফলে অক্সিজেন ও পুষ্টি কম পৌঁছায়, আর তখন পায়ের তলায় জ্বালা, ব্যথা ও ক্লান্তি বাড়ে। পা মাঝে মাঝে উঁচু করে রাখলে আরামদায়ক এবং ভেন্টিলেটেড জুতা ব্যবহার করলে এই সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
থাইরয়েড ও কিডনি সমস্যা

থাইরয়েড হরমোনের গণ্ডগোল বা কিডনি সঠিকভাবে কাজ না করলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে শুরু করে। এর প্রভাব পড়ে স্নায়ুতন্ত্রে, আর তখন পায়ের তলায় জ্বালা বা অসাড়তা দেখা দেয়। সময়মতো পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করলে এই সমস্যা আরো ভয়াবহ হতে পারে।
ঘরোয়া প্রতিকার
- ঠাণ্ডা পানিতে পা ভিজিয়ে রাখা বা পানি ঢালা সাময়িক স্বস্তি দেয়।
- অ্যালোভেরা জেল লাগালে জ্বালা ও প্রদাহ কমে।
- নরম ও আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন।
- নিয়মিত পা পরিষ্কার ও শুকনা রাখুন।
- পায়ে হালকা ম্যাসাজ বা ব্যায়াম রক্তসঞ্চালন বাড়ায়।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন
- জ্বালার সঙ্গে অসাড়তা বা ঝিমঝিম ভাব থাকলে।
- হাঁটাচলায় অসুবিধা হলে।
- পায়ে ক্ষত বা ফাটল তৈরি হয়ে ভালো না হলে।
- জ্বর, ফোলা বা ত্বকের রং পরিবর্তন হলে।