অনেক সময় পেটে ব্যথা হলে অনেকে সহজভাবে বলে দেন, “হয়তো পেটে পাথর হয়েছে!” কিন্তু আসলেই কি পেটে পাথর হয়? কোথায় হয়? আর কেমন ব্যথা হলে সত্যিই এটি পিত্তথলির পাথর (গলস্টোন) হতে পারে?
রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউটের পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ ডা. মুসআব খলিল জানিয়েছেন, পিত্তথলি (Gallbladder) হলো আমাদের লিভারের নিচে, পেটের উপরের ডান দিকে থাকা একটি ছোট থলির মতো অঙ্গ। এর প্রধান কাজ হলো খাবার হজমে সহায়তা করা, বিশেষত চর্বিজাতীয় খাবার হজমে। এই পিত্তথলিতেই মাঝে মাঝে ছোট-বড় পাথরের মতো বস্তু তৈরি হয়, যাকে বলা হয় গলস্টোন।
পিত্তথলির পাথর মানে কী?

পিত্তথলির ভেতরে যে তরল থাকে তাকে বলা হয় পিত্তরস। এই পিত্তরসে থাকে কোলেস্টেরল, বিলিরুবিন ও বিভিন্ন লবণ। কোনো কারণে এগুলো জমাট বেঁধে গেলে ছোট-বড় পাথরের মতো দানা তৈরি হয়। এই পাথর হতে পারে ধুলিকণার মতো ছোট কিংবা টেনিস বলের মতো বড়। কারও ক্ষেত্রে একটিমাত্র পাথর তৈরি হয়, আবার অনেকের ক্ষেত্রে একসঙ্গে একাধিক পাথর হয়।
পিত্তথলিতে পাথর হলে কী লক্ষণ দেখা দেয়?
গলস্টোন অনেক সময় বছরের পর বছর কোনো উপসর্গ ছাড়াই শরীরে থাকতে পারে। তবে যখন এটি পিত্তনালিতে আটকে যায় বা প্রদাহ সৃষ্টি করে, তখন বেশ কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—
- পেটের উপরিভাগের ডান দিকে হঠাৎ তীব্র ব্যথা
- ব্যথা কয়েক মিনিট থেকে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে
- বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া
- চোখ ও ত্বক হলদেটে হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)
- জ্বর বা শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
এসব লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?

ডা. মুসআব খলিল জানান, নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় বেশি। এছাড়া আরও কিছু ঝুঁকির কারণ রয়েছে—
- বয়স ৪০ বছর বা তার বেশি
- অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা
- অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার অভ্যাস
- শাকসবজি ও আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া
- খুব দ্রুত ওজন কমানো (যেমন হঠাৎ ডায়েটিং বা অপারেশনের পর)
- ইস্ট্রোজেন জাতীয় ওষুধ সেবন
- কিছু রক্তের রোগ বা লিভারের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা
জটিলতা কী হতে পারে?
পিত্তথলিতে পাথর হলে প্রাথমিকভাবে তীব্র ব্যথা ও হজমের সমস্যা হয়। তবে চিকিৎসা না করালে এর ফলে আরও জটিলতা তৈরি হতে পারে। যেমন—
- কোলেসিস্টাইটিস (পিত্তথলির প্রদাহ)
- পিত্তনালির প্রতিবন্ধকতা
- প্যানক্রিয়াটাইটিস বা অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ
- দীর্ঘমেয়াদে পিত্তথলির ক্যানসারের ঝুঁকি (যদিও তুলনামূলকভাবে কম)
চিকিৎসা কী?

চিকিৎসকদের মতে, একবার উপসর্গ দেখা দিলে গলস্টোনের স্থায়ী চিকিৎসা হলো অস্ত্রোপচার করে পিত্তথলি অপসারণ। ওষুধ বা অন্য কোনো উপায়ে স্থায়ীভাবে এই সমস্যা সারানো সম্ভব নয়। অনেক সময় ছোট ও উপসর্গহীন পাথর চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়, কিন্তু ব্যথা বা জটিলতা দেখা দিলে দ্রুত সার্জারিই একমাত্র সমাধান।
কী করবেন?
পেটের উপরিভাগে ডান দিকে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব বা চোখ-ত্বক হলদেটে হয়ে গেলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন করেও ঝুঁকি কমানো সম্ভব—
- নিয়মিত সুষম ও আঁশযুক্ত খাবার খান
- অতিরিক্ত তেল-চর্বি এড়িয়ে চলুন
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- হঠাৎ ডায়েটিংয়ের মাধ্যমে দ্রুত ওজন কমানো এড়িয়ে চলুন
শেষ কথা
পিত্তথলিতে পাথর অনেক সময় নীরব থেকে শরীরে জটিলতা তৈরি করতে পারে। তাই ঝুঁকির মধ্যে থাকলে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং সন্দেহজনক উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা নিলে এটি জটিল রোগে পরিণত হওয়ার আগেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।