নিউজ ডেস্ক: এডিএইচডি, যার পূর্ণরূপ অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভিটি ডিজঅর্ডার। এটি স্নায়ু ও মস্তিষ্কের জটিল সমস্যা বা রোগ। এটি আদতে অনেক সমস্যা ও উপসর্গের সমন্বিত রূপ। এত দিন প্রচলিত ছিল, শিশু ও অল্প বয়সীদের মধ্যেই সমস্যাটি দেখা যায়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বড়দের মধ্যেও সমস্যাটি দেখা যেতে পারে।
এডিএইচডি কী
মস্তিষ্ক ও শরীরের বিভিন্ন স্নায়ু আমাদের বুদ্ধি, বিকাশ, মনন, আচরণ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রয়োজনীয় পরিবর্তন হতে থাকে ও পরিণত হয়। এর ব্যত্যয় হলে শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। যেমন মনোযোগ কমে যাওয়া, চিন্তাশক্তি ও স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, মনঃসংযোগ ধরে রাখতে না পারা, অতিরিক্ত তৎপরতা, এমনকি সময়ে সময়ে আগ্রাসী মনোভাব—এসবই এর অন্তর্ভুক্ত। এসব লক্ষণকে একসঙ্গে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলে এডিএইচডি।
গবেষণায় প্রমাণিত যে বড়দেরও এডিএইচডি হতে পারে। কিছু লক্ষণ নিয়মিত দেখা দিলে ধরে নেওয়া যায় যে তার এডিএইচডি আছে।
কিছু লক্ষণ আছে, যেসব মনোযোগ হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন—
১. সহজে মনঃসংযোগের ব্যাঘাত: কেউ যদি খুব সহজে একটি কাজ থেকে সরে যায় বা মনোযোগ ধরে রাখতে না পারে এবং খুব সামান্য কারণে মনঃসংযোগ ব্যাহত হয়, তাহলে তার এডিএইচডি আছে কি না, তা দেখতে হবে।
২. কাজকর্মে নিয়মিত ভুল: এটি আগের লক্ষণটির একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলা যায়। অনেকে নিয়মিত কাজকর্ম আগের মতো সঠিকভাবে করতে পারে না, অনেক ভুল হয়। এটিও আরেকটি লক্ষণ।
৩. কাজ শেষ করতে অপারগতা ও অনীহা: মস্তিষ্কের জটিল কার্যক্রমগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে কষ্ট হওয়ায় যেসব কাজে মস্তিষ্ক সঞ্চালন প্রয়োজন, সেসবে অপারগতা প্রকাশ, কাজকর্মে অলসতা ও অনীহাও এর লক্ষণ।
৪. সহজে ভুলে যাওয়া: মনোযোগের ঘাটতির কারণে এটি হয়। তবে শুধু এককভাবে এই উপসর্গ দেখা দিলে স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অন্যান্য কারণ আগে পর্যালোচনা করতে হবে। এ কারণে অনেকে সময়ের কাজ সময়ে করতে পারেন না।
আবার কিছু লক্ষণ আছে, যেসব অতিরিক্ত কর্মতৎপরতার সঙ্গে যুক্ত। যেমন—
১. অতিরিক্ত অস্থির ভাব: কেউ কেউ অল্পতেই অস্থির হয়ে যায়। যেকোনো কাজেই অস্থির ভাব দেখায়। এটিও একধরনের উপসর্গ হতে পারে। অনেকে এক জায়গায় বসে থাকতে পারে না। এক কাজ টানা করতে পারে না।
২. সামাজিক সংযোগে অনীহা: এর কারণে অনেকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কার সঙ্গে কেমন করে যোগাযোগ রাখতে হবে, কাকে কী বলা যাবে, বলা যাবে না, সেসব সমন্বয় করতে পারে না। ফলে একসময় সেই ব্যক্তি অসামাজিক হয়ে যায়।
৩. বদমেজাজ ও রগচটা স্বভাব: এ সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের কেউ কেউ অল্পতেই রেগে যায়, সামান্য কারণে মেজাজ হারিয়ে ফেলে। আবার কেউ কেউ অল্পতেই বিরক্ত হয়।
৪. খিটখিটে মেজাজ: আরেকটি লক্ষণ হলো খিটখিটে মেজাজ। কেউ কেউ হতাশায় আচ্ছন্ন থাকে।
করণীয়
লক্ষণগুলোর সঙ্গে নিজের আচরণ মিলে গেলে আপনি সন্দেহ করতে পারেন যে এডিএইচডি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করতে হবে। জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন নিয়মিত শরীরচর্চা ও ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ও সময়মতো ঘুমানো। মানসিক চাপ পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে কমিয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি অবশ্যই একজন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক কিছু ওষুধের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। এ ছাড়া কিছু কাউন্সেলিং সেশন কার্যকর হতে পারে।


