বাংলাদেশে প্রতি বছর ১.৫ থেকে ২ লাখ নতুন ক্যানসার রোগী শনাক্ত হন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, উন্নত ক্যানসার চিকিৎসায় ৬০–৭০% রোগীর একপর্যায়ে রেডিয়েশন থেরাপি প্রয়োজন হয়—চিকিৎসা, দীর্ঘায়ু এবং ব্যথা উপশমে এটি অত্যন্ত কার্যকর একটি পদ্ধতি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের দেশে রেডিওথেরাপি এখনো সীমিত ও অপ্রতুল একটি পরিষেবা।
কেন এই ঘাটতি?
বর্তমানে দেশে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ২৫টি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর (LINAC) মেশিন রয়েছে। প্রতিটি মেশিনে গড়ে ৮০–১০০ রোগীকে প্রতিদিন চিকিৎসা দিতে হচ্ছে, যেখানে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী তা ৩০–৪০ রোগীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।
ফলে—
• রোগীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষায় থাকেন, রোগ বাড়ে বা ছড়িয়ে পড়ে।
• অনেকে ক্লান্তি, সময় বা অর্থের অভাবে মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করে দেন।
• অনেকেই শেষ পর্যন্ত চিকিৎসাই পান না।
সমাধান কি শুধু যন্ত্রসংখ্যা বাড়ানো?
না। কেবল যন্ত্র আনলেই সংকট দূর হবে না। প্রয়োজন:
• প্রশিক্ষিত রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট,
• দক্ষ মেডিকেল ফিজিসিস্ট ও টেকনোলজিস্ট,
• সহানুভূতিশীল কেয়ার টিম।
বাস্তবভিত্তিক করণীয়:
১. সরকার–বেসরকারি অংশীদারিত্ব (PPP)
বেসরকারি অনেক হাসপাতাল আধুনিক রেডিওথেরাপি সুবিধা রাখলেও ব্যয়বহুল হওয়ায় তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। সরকার চাইলে PPP মডেলের মাধ্যমে—
• রোগীকে নির্ধারিত বেসরকারি হাসপাতালে পাঠাতে পারে,
• চিকিৎসার ব্যয় সরকারি তহবিল থেকে প্রদান করতে পারে,
• দ্রুত ও মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
২. সমাজকল্যাণ অনুদানের সংস্কার
বর্তমান ৫০ হাজার টাকার অনুদানকে বাড়িয়ে ৭৫ হাজার বা ১ লাখ টাকা করা যেতে পারে এবং সরাসরি হাসপাতালকে প্রদানের ব্যবস্থা থাকলে রোগীর ভোগান্তি কমবে।
৩. বিভাগীয় পর্যায়ে আধুনিক ইউনিট
প্রতিটি বিভাগীয় শহর ও সরকারি মেডিকেল কলেজে একটি করে রেডিওথেরাপি ইউনিট চালু করা জরুরি। পাশাপাশি,
• একটি জাতীয় রেডিওথেরাপি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যেখানে নিয়মিত অনকোলজিস্ট, ফিজিসিস্ট, টেকনোলজিস্ট ও নার্স প্রশিক্ষণ পাবেন।
৪. ক্যানসার চিকিৎসা: একটি অর্থনৈতিক বিনিয়োগ
একজন কর্মক্ষম মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার ও কর্মজীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই ক্যানসার চিকিৎসায় বিনিয়োগকে খরচ নয়, একটি অর্থনৈতিক ও মানবসম্পদ উন্নয়নের অংশ হিসেবে দেখা উচিত।
৫. একটি কার্যকর জাতীয় ক্যানসার নীতি
একটি হালনাগাদ ন্যাশনাল ক্যানসার কন্ট্রোল প্রোগ্রাম (NCCP) জরুরি, যাতে থাকে—
• সহজলভ্য স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম (ব্রেস্ট, সার্ভিকাল, কোলন),
• ধাপে ধাপে রেফারেল ব্যবস্থা,
• সরকারি–বেসরকারি চিকিৎসার সমন্বয়,
• সুনির্দিষ্ট বাজেট পরিকল্পনা।
উপসংহার
আমরা এখন এক সংকটকাল অতিক্রম করছি, তবে এটাই পরিবর্তনের সময়। রেডিওথেরাপি সেবা সম্প্রসারণে যদি এখনই—
• বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা,
• সরকারি সদিচ্ছা,
• ও বেসরকারি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যায়,
তবে আমরা ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা করতে পারব।
সময় এসেছে—স্বাস্থ্যকে খরচ নয়, জাতীয় বিনিয়োগ হিসেবে ভাবার।
সময় এসেছে—ক্যানসারের বিরুদ্ধে একসঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার।


