টবেই চাষ হবে লেটুস পাতা। লেটুস হলো অ্যাস্টেরাসি পরিবারের একটি একবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এটি মূলত পাতাযুক্ত সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও কখনো কখনো এর কাণ্ড ও বীজও ব্যবহার করা হয়। লেটুসকে বলা যায় একটি বহুমুখী সবজি। কারণ এটি সালাদের জন্য অন্যতম প্রধান উপাদান হলেও স্যুপ, স্যান্ডউইচ, বার্গার, র্যাপ এমনকি গ্রিল করা খাবারেও ব্যবহার করা যায়।
এখন অনেকেই শহুরে জীবনে টবে বা ছাদের বাগানে সহজ কিছু সবজি চাষ করতে আগ্রহী হচ্ছেন। লেটুস তাদের জন্য চমৎকার একটি বিকল্প। কারণ অল্প যত্নেই এটি জন্মানো যায় এবং স্বল্প সময়ের মধ্যেই ফসল পাওয়া সম্ভব। নিচে ধাপে ধাপে টবে লেটুস চাষের পদ্ধতি আলোচনা করা হলো।
বাড়িতে টবেই করুন লেটুস শাকের চাষ

আবহাওয়া ও মৌসুম
লেটুস শীতল আবহাওয়া পছন্দ করে। অতিরিক্ত গরমে এর পাতা শক্ত ও তিতা হয়ে যায়। তাই শীতল ঋতুই এর চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর লেটুস চাষের জন্য আদর্শ সময়। এ সময়ে আবহাওয়া তুলনামূলক শীতল থাকে, ফলে বীজ সহজেই অঙ্কুরিত হয় এবং গাছ ভালোভাবে বেড়ে ওঠে।
মাটি প্রস্তুতি
টবে লেটুস চাষের জন্য মাটিকে বিশেষভাবে প্রস্তুত করতে হয়। লেটুসের জন্য পানি নিষ্কাশনযোগ্য, ঝুরঝুরে ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মাটি অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে দো-আঁশ মাটি সবচেয়ে ভালো ফল দেয়। মাটির পিএইচ ৬.০ থেকে ৬.৮ এর মধ্যে থাকা উত্তম।
মাটি তৈরির জন্য বাগানের মাটি, জৈব সার (কম্পোস্ট বা গোবর সার) এবং সামান্য বালি মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে। মিশ্রণের অনুপাত হবে প্রায় ৫০% বাগানের মাটি, ৩০% কম্পোস্ট এবং ২০% বালি। এতে মাটির ভেতর বাতাস চলাচল সহজ হবে এবং গাছ দ্রুত বাড়বে।
বীজ রোপণ পদ্ধতি

লেটুসের বীজ খুব ছোট আকারের হয়, তাই বপনের সময় সতর্কতা জরুরি। টবের মাটিতে প্রায় ০.৫ থেকে ১ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। সরাসরি টবেই বীজ বপন করা যায়, আবার চাইলে ছোট ট্রেতে চারা তৈরি করে পরে টবে রোপণ করাও সম্ভব।
বীজ বপনের পর হালকা পানি দিতে হবে, তবে মাটি যাতে একেবারে কাদা না হয়ে যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রায় ৭–১০ দিনের মধ্যে চারা গজাবে।
আলো ও পানি
লেটুস গাছ পূর্ণ বা আংশিক সূর্যালোক পছন্দ করে। প্রতিদিন অন্তত ৪–৫ ঘণ্টা আলো প্রয়োজন। তবে অতিরিক্ত রোদ হলে পাতার সতেজতা কমে যেতে পারে। তাই টব এমন স্থানে রাখা উচিত যেখানে সকালে রোদ পড়ে কিন্তু দুপুরে ছায়া থাকে।
লেটুসের জন্য অতিরিক্ত পানি প্রয়োজন হয় না। তবে মাটি সবসময় আর্দ্র রাখতে হবে। মাটিতে শুকনো ভাব এলে পানি দিতে হবে। টবের নিচে ড্রেনেজ হোল থাকতে হবে, যাতে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায় এবং শিকড় পচে না যায়।
সার প্রয়োগ
পাতা সবুজ ও সতেজ রাখতে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ সার ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য ধীর-মুক্ত জৈব সার সবচেয়ে ভালো। প্রতি ১৫–২০ দিন পর পর তরল সার বা জৈব সার প্রয়োগ করলে গাছের পাতা ঘন এবং কোমল হবে। রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই উত্তম, কারণ টাটকা অবস্থায় লেটুস সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়।
গাছের যত্ন
- গাছ বড় হলে কাছাকাছি থাকা চারা পাতলা করে দিতে হবে, যাতে প্রতিটি গাছ পর্যাপ্ত জায়গা পায়।
- লেটুস তুলনামূলক দ্রুত বেড়ে ওঠে। তাই নিয়মিত মাটির উপরিভাগ ঝুরঝুরে রাখতে হবে।
- পোকামাকড় হলে প্রাকৃতিক কীটনাশক যেমন নিমপাতার রস ব্যবহার করা যেতে পারে।
সংগ্রহের সময়

লেটুস চারা রোপণের ৪৫–৬০ দিনের মধ্যেই ফসল সংগ্রহ করা যায়। গাছ যখন ১০–১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হবে এবং পাতা ঘন হবে তখন পাতা কেটে খাওয়া যায়। চাইলে গোড়াসহ গাছও তুলে নেওয়া যায়।
সংগ্রহের সময় সকালবেলা কাটা উত্তম, কারণ তখন পাতায় সতেজতা বেশি থাকে। সংগ্রহের পর ফ্রিজে রেখে কয়েকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।
শেষ কথা
টবে লেটুস চাষ একদিকে যেমন সহজ, অন্যদিকে স্বাস্থ্যকর সবজি নিজের বাড়িতেই পাওয়া যায়। শীতল আবহাওয়া, সঠিক মাটি, নিয়মিত পানি ও সার প্রয়োগ—এসব নিশ্চিত করতে পারলেই বাড়ির ছাদ বা বারান্দায় টবেই লেটুস চাষ করা সম্ভব। তাই এখন থেকে বাজারের ব্যয়বহুল লেটুস কিনতে হবে না। একটু যত্ন নিলেই ঘরোয়া পরিবেশেই টাটকা লেটুস খাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। শহুরে জীবনে স্বাস্থ্যকর সবজি পাওয়ার এই পদ্ধতি নিঃসন্দেহে একটি দারুণ উদ্যোগ হতে পারে।
সংগ্রহের সময় সকালবেলা কাটা উত্তম, কারণ তখন পাতায় সতেজতা বেশি থাকে। সংগ্রহের পর ফ্রিজে রেখে কয়েকদিন পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।