ইসরাইল গত দুই বছরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যে একের পর এক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে—তা যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক সহায়তা ছাড়া সম্ভব হতো না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’-এর নতুন দুই প্রতিবেদন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
প্রতিবেদন দুটিতে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ২১ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে। এই সহায়তা না পেলে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালানো, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করা কিংবা ইয়েমেনে বারবার বোমাবর্ষণ করা—কোনোটাই অব্যাহত রাখতে পারত না।
মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর এইচ রহমান আল জাজিরাকে বলেন, ‘গাজা ও অঞ্চলের অন্যান্য যুদ্ধ পরিচালনায় ইসরাইলের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অপরিহার্য।’
গাজায় ইসরাইলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৬৭ হাজার ১৬০ জন নিহত এবং ১ লাখ ৬৯ হাজার ৬৭৯ জন আহত হয়েছেন। হাজারো মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। ইয়েমেনে ইসরাইলি হামলায় বহু মানুষ নিহত হয়েছে, আর ইরানে জুন মাসে পরিচালিত হামলায় মারা গেছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ।
‘আমেরিকান অর্থ ছাড়া সম্ভব হতো না’
‘ইউএস মিলিটারি এইড অ্যান্ড আর্মস ট্রান্সফার্স টু ইসরাইল (অক্টোবর ২০২৩–সেপ্টেম্বর ২০২৫)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে গবেষক উইলিয়াম ডি হার্টাং লিখেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, অস্ত্র ও রাজনৈতিক সহায়তা ছাড়া ইসরাইল এত ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারত না।’
প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটক্রাফট, যা মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি থেকে ‘অন্তহীন যুদ্ধ’ পরিহার করে কূটনৈতিক সংযমে ফেরার আহ্বান জানায়।
আরেক প্রতিবেদনে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের বাজেট বিশেষজ্ঞ লিন্ডা বিলমেস জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে মার্কিন সামরিক সহায়তা ও অপারেশনে মোট ব্যয় হয়েছে ৩১ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলার।
দ্বিদলীয় সমর্থনের ঐতিহ্য
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সহায়তার সবচেয়ে বড় গ্রহীতা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরাইল। বছরে প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পায় দেশটি, আর মোট হিসেবে ২০২২ সাল পর্যন্ত পেয়েছে ১৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
হার্টাং-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প—দুই প্রশাসনই ইসরাইলকে বিপুল অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করেছে, যা আগামী বছরগুলোতেও পরিশোধ করা হবে।
ওমর রহমান বলেন, ‘এই দ্বিদলীয় সমর্থন ইসরাইলকে বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সুযোগ দিয়েছে—পশ্চিমা গণতন্ত্রগুলোও এ নিয়ে তেমন প্রশ্ন তোলে না।’
মার্কিন জনগণের মনোভাব বদলাচ্ছে
তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইলের প্রতি জনসমর্থন দ্রুত কমছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ ইহুদি নাগরিক মনে করেন গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে, আর ৬০ শতাংশের বেশি বলেন দেশটি যুদ্ধাপরাধ করেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির নির্বাহী সহ-সভাপতি ম্যাট ডাস বলেন, ‘২০২৮ সালের নির্বাচনে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই এই গণহত্যায় বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা অস্বীকার করে পার পাবেন না।’
‘আমরা সবসময়ই ইসরাইলের জন্য অর্থ খুঁজে পাই’
বিশ্লেষকরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সামাজিক সুরক্ষার নেটওয়ার্ক দুর্বল হলেও ইসরাইলের জন্য বিলিয়ন ডলার সহায়তা বরাদ্দ সবসময়ই পাওয়া যায়।
ডাস বলেন, ‘এটা শুধু ইসরাইল নয়, আমেরিকার সামরিক শিল্প-কমপ্লেক্সেরও বিজয়। কারণ এই সহায়তার বড় অংশই মার্কিন কোম্পানিগুলোর অস্ত্র বিক্রিতে যায়।’