মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

ভরা মৌসুমেও অধরা ইলিশ

শনিবার, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

আজমল হোসেন: বাংলার মানুষের প্রিয় মাছ রূপালি ইলিশ। আর ভাদ্র মাস মানেই ইলিশের ভরা মৌসুম। এ সময় নদী-নালা, হাট-বাজারে ইলিশের প্রাচুর্য থাকবে, এমন প্রত্যাশায় থাকে জেলে থেকে সাধারণ ভোক্তা সবাই। কিন্তু এ বছর সেই প্রত্যাশার অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। ভরা মৌসুমেও বাজারে ইলিশের সরবরাহ আশানুরূপ নয়, ফলে দামও আকাশচুম্বী।

জেলেদের অভিযোগ, নদীতে যথেষ্ট পানি থাকলেও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে না। কেউ কেউ বলছেন, পানির স্রোতের অভাব, অনুকূল আবহাওয়ার অভাব এবং নদীতে অতিরিক্ত ট্রলার নামায় প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়াই মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। মেঘনা, পদ্মা, তেঁতুলিয়া, ইছামতি, শীতলক্ষ্যা সব নদীতেই একই চিত্র। দিনে পরিশ্রম করেও জেলেদের অনেক সময় খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ঘরে।

অন্যদিকে ক্রেতাদের ক্ষোভ, বাজারে যে অল্প কিছু ইলিশ উঠছে তার দাম হাতের নাগালে নেই। এক কেজি মাঝারি আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। ফলে ইলিশভোজী মধ্যবিত্ত পরিবারের কেবল হাহাকারই বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবাধে ডিমওয়ালা ইলিশ ধরা, নদীর দখল ও দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ইলিশের প্রজননে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় ইলিশের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। প্রতিবছর সরকারের দেওয়া প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলেও অনিয়ম-অবহেলা এবং জাল ব্যবহারের মতো সমস্যাগুলো থেকে যাচ্ছে আগের মতোই।

সরকারি কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জেলেদের জন্য বিশেষ ভাতা, জাটকা নিধন রোধে অভিযান এবং প্রজনন মৌসুমে কড়া নজরদারির কথাও বলা হচ্ছে। তবে বাস্তবে এর কার্যকারিতা কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয় জেলে ও ব্যবসায়ীরা।

সব মিলিয়ে ভরা মৌসুমেও ইলিশ অধরা থেকে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাই এখন কেবল বাজারের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন—‘রূপালি স্বপ্ন’ যেন অধরাই রয়ে যাচ্ছে।