বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

মধ্যপ্রাচ্যে দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় ৩৪ বিলিয়ন ডলার, ইসরাইল পেয়েছে কত?

মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

মধ্যপ্রাচ্যে গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৪ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু ইসরাইলই পেয়েছে ২১ বিলিয়নের বেশি সহায়তা। ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রকল্প ‘কস্ট অব ওয়ার প্রজেক্ট’-এর নতুন প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা ছাড়া ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন, ইয়েমেনে বিমান হামলা বা ইরানের সঙ্গে সংঘাত চালিয়ে যেতে পারত না। কুইন্সি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র গবেষক উইলিয়াম ডি হার্টাংয়ের মতে, ওয়াশিংটনের অর্থ ও অস্ত্রই ইসরাইলকে এই ধ্বংসযজ্ঞে টিকে থাকার শক্তি জুগিয়েছে।

‘ইউএস মিলিটারি এইড অ্যান্ড আর্মস ট্রান্সফার্স টু ইসরাইল, অক্টোবর ২০২৩–সেপ্টেম্বর ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা ও মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক কর্মকাণ্ডে মোট ৩১ দশমিক ৩৫ থেকে ৩৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। এতে স্পষ্ট, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরাইলের পক্ষে একাধিক ফ্রন্টে দুই বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না।

মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো ওমর এইচ রহমান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া ইসরাইল গাজা বা অঞ্চলের অন্য কোথাও যুদ্ধ চালাতে পারত না। এই সহায়তা তাদের জন্য সম্পূর্ণ অপরিহার্য।”

গাজায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলি হামলায় নিহত হয়েছে অন্তত ৬৭ হাজার ১৬০ জন এবং আহত ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ চাপা পড়ে আছে। এছাড়া ইয়েমেন, লেবানন, সিরিয়া ও ইরানে একাধিক হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরাইলের স্থায়ী যুদ্ধযন্ত্র টিকিয়ে রাখার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ, অস্ত্র এবং রাজনৈতিক সমর্থনই মূল ভিত্তি। ইসরাইলের বার্ষিক বিদেশি সহায়তার পরিমাণ ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। ২০২২ সাল পর্যন্ত দেশটি মোট ১৫০ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবশ্য ইসরাইলকে এই অন্ধ সমর্থন নিয়ে ধীরে ধীরে বিরূপতা বাড়ছে। ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে দেখা যায়, ১০ জনের মধ্যে চারজন মার্কিন ইহুদি বিশ্বাস করেন, গাজায় ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে। ৬০ শতাংশের বেশি মনে করেন, দেশটি যুদ্ধাপরাধ করেছে।

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিসির নির্বাহী সহসভাপতি ম্যাট ডাসের মতে, বাইডেন প্রশাসনের এই যুদ্ধ–সমর্থন ভবিষ্যতে মার্কিন রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে। ২০২৮ সালের নির্বাচনে কোনো ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই এই দায় এড়াতে পারবে না।

সমালোচকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বিপুল অর্থসাহায্যের বোঝা শেষ পর্যন্ত সাধারণ করদাতাদের কাঁধেই পড়ছে। ম্যাট ডাসের ভাষায়, “যেখানে আমেরিকানদের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সবচেয়ে দুর্বল, সেখানে ইসরাইলের যুদ্ধের জন্য বিলিয়ন ডলার খরচ করা একেবারেই অযৌক্তিক।”

তিনি আরও বলেন, এই সহায়তা শুধু ইসরাইলের স্বার্থে নয়; যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শিল্প–জটিলতারও লাভ হচ্ছে এতে। বিপুল পরিমাণ অস্ত্রচুক্তির মুনাফা যাচ্ছে মার্কিন কোম্পানিগুলোর পকেটে।