অবশেষে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ালেন নিউইয়র্ক নগরীর বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস। সামাজিক যোগযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে তিনি নিজেই এ ঘোষণা দেন।
সোমবার সংবাদমাধ্যম সিএনএন এক প্রতিবেদনে বলছে, দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মনোনীত প্রার্থী জোহরান মামদানির বিরোধীরা এরিক অ্যাডামসের সরে দাঁড়ানোর দাবি করে আসছিলেন।
এক্সে এক ভিডিও বার্তায় এরিক বলেন, ‘এত এত অর্জন সত্ত্বেও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে নিতে পারছি না।’ কারণ হিসেবে তিনি সংবাদমাধ্যমে ক্রমাগত নেতিবাচক প্রচার ও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার তহবিল সংকটের কথা উল্লেখ করেছেন।
এতে আরও বলা হয়, এরিক অ্যাডামসের এই সিদ্ধান্তের ফলে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা নতুন মোড় নিল, যা নিউইয়র্কের সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেখা যায়নি।
গত ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ফক্স নিউজ পরিচালিত জরিপ বলছে—ভোটারদের ৪৫ শতাংশ ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানিকে, ২৭ শতাংশ নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে, ১১ শতাংশ রিপাবলিকান পার্টির কার্টিস স্লিওয়া ও ৮ শতাংশ স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসের পক্ষে মত দিয়েছেন।
এমন তথ্য প্রকাশের পর পুনর্নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য এরিক অ্যাডামসের ওপর চাপ বাড়ছিল। বিশেষ করে, অ্যান্ড্রু কুয়োমোর সমর্থকরা চাচ্ছিলেন যে এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ালে সেসব ভোট সাবেক গভর্নরের বাক্সে পড়বে। আর এমনটি হলে আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া মেয়র নির্বাচনে প্রভাবশালী প্রার্থী জোহরান মামদানিকে হারানো সহজ হবে।
সংবাদ প্রতিবেদন অনুসারে, নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আশা করছেন এরিক অ্যাডামস সরে দাঁড়ানোয় নির্বাচন আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি মেয়র এরিকের সঙ্গে দেখা করে ট্রাম্প প্রশাসনে তার সম্ভাব্য চাকরি বিষয়ে কথা বলেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এরিক অ্যাডামসের সরে দাঁড়ানোর ফলে ঠিক কত ভোট অ্যান্ড্রু কুয়োমো পাবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। ট্রাম্প চাচ্ছেন রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাক। তবে স্লিওয়া বারবার বলছেন, তার এমন পরিকল্পনা নেই।
নির্বাচনী প্রতিযোগিতা থেকে বর্তমান মেয়র সরে দাঁড়ানোয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতা অ্যান্ড্রু কুয়োমো।
তিনি বলেন, ‘মেয়র অ্যাডামস আজ যে সিদ্ধান্ত নিলেন তা নেওয়া এত সহজ ছিল না। আমার বিশ্বাস তিনি নিজের ব্যক্তিগত ভালোমন্দের তুলনায় নিউইয়র্কবাসীর ভালোমন্দের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।’
তার প্রচারণাকর্মীরা আশা করছেন, এরিকের সরে দাঁড়ানোয় কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের একটি অংশ কুয়োমোকে ভোট দেবেন। এটি অল্প হলেও কুয়োমোর ভোট বাড়াবে।
একদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যেমন চাচ্ছেন জোহরান মামদানি পরাজিত হোক, অন্যদিকে নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ও জাতীয় পর্যায়ের ডেমোক্র্যাট নেতারা চাচ্ছেন তাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে।
সম্প্রতি, অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ও ডেমোক্র্যাট নেতা ক্যাথি হোকুল তার পছন্দের প্রার্থী হিসেবে জোহরান মামদানিকে সমর্থন দিয়েছেন। যোগ দিয়েছেন সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসও।
তবে, হাউস মাইনোরিটি নেতা হাকিম জেফ্রিস ও সিনেট মাইনোরিটি নেতা চাক শুমার এখনো তাদের দলীয় প্রার্থী জোহরান মামদানিকে সমর্থন দেননি। এই দুই প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট নেতা নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের বাসিন্দা।
এরিক অ্যাডামসের সরে যাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় জোহরান মামদানি বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার ধনকুবের বন্ধুরা হয়ত এরিক অ্যাডামস ও অ্যান্ড্রু কুয়োমোর ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারেন। কিন্তু, নির্বাচনের ফল বদলানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। এক দুর্নীতিবাজ নেতা আরেক দুর্নীতিবাজ নেতার সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। নিউইয়র্ক এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করে।’
সম্প্রতি, এরিক অ্যাডামস অভিযোগ করেন যে সংবাদমাধ্যম তার আমলের কাজকর্ম নিয়ে নেতিবাচক তথ্য প্রকাশ করছে। এ কারণে তার তহবিল জোগাড় করতেও বেগ পেতে হচ্ছে।
জোহরান মামদানিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্ক নগরীর জন্য হুমকি মনে করেন। জোহরান মেয়র নির্বাচিত হলে তিনি নিউইয়র্ক নগরী ‘দখল’ করে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। তিনি আবার এটাও বলেছিলেন যে জোহরান বিজয়ী হলে তা রিপাবলিকান পার্টির জন্য ‘বাড়তি সুবিধা’ বয়ে আনবে।
বাস্তবতা হচ্ছে, ট্রাম্প চান মেয়র নির্বাচনে জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে একক প্রার্থী লড়াই করুক যাতে তাকে হারানো যায়। আর সেই পথেই যেন এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এরিক অ্যাডামসের পর কার্টিস স্লিওয়াকে সরিয়ে দিতে পারলে নির্বাচন হবে জোহরান মামদানি ও অ্যান্ড্রু কুয়োমোর সঙ্গে। তখন এই দুই প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি।
আপাতদৃষ্টিতে, কুয়োমোর ২৭ শতাংশের সঙ্গে স্লিওয়ার ১১ ও এরিকের ৮ শতাংশ যোগ করছে ফল দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশ। এটি জোহরান মামদানির ৪৫ শতাংশের তুলনায় সামান্য বেশি।