গাজা সিটিতে ব্যাপক অভিযানের ঘোষণা দিয়ে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। শুক্রবার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের কাছে উপকূলীয় সড়কে দক্ষিণমুখী পথে রওনা হওয়া গাজা সিটির বাসিন্দাদের লম্বা সারি। এএফপি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর কয়েক দিনের মধ্যেই মরিয়মের জগতে অন্ধকার নেমে আসে। ইসরায়েলের হামলায় গাজা সিটিতে তাঁর বাড়ি, সন্তানদের স্কুল এবং যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন, সেটিও ধ্বংস হয়ে যায়। ওই বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে মরিয়মের পরামর্শদাতা গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ও খ্যাতিমান ফিলিস্তিনি বিজ্ঞানী অধ্যাপক সুফিয়ান তায়েফ সপরিবারে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হন।
ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ানকে মরিয়ম জানান, অধ্যাপক তায়েফ ছিলেন তাঁর বাবার মতো। তিনি বলেন, ‘আমি যখন তাঁর নিহত হওয়ার খবর শুনি, মনে হলো পুরো পৃথিবী ভেঙে পড়েছিল।’
মরিয়ম বার বার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল পদার্থবিজ্ঞানী হওয়ার। যখন রাফার একটি শরণার্থী শিবিরে তিনি থাকছিলেন, তখন সেখানে ইন্টারনেট বা বিদ্যুতের সুবিধাও ছিল না। তিনি জানতে পারেন, সীমান্তের কাছে একটি জায়গায় কিছুটা মিসরীয় ইন্টারনেটের সুবিধা পাওয়া যায়। ঝুঁকির কাজ হলেও সেই সুযোগ নিয়ে তিনি বিদেশে অধ্যয়নের আবেদন শুরু করেন। অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডে তাঁর পিএইচডি ডিগ্রিতে অধ্যয়নের সুযোগ হয়।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় এমন গল্প আরও আছে। মরিয়ম ধ্বংসস্তূপে স্বপ্ন দেখা মানুষ। তাঁর মতো কয়েক ডজন মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছেন, গাজা থেকে যারা বিশ্বের নানা খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করতে চান। তাদের মূল প্রতিবন্ধকতা যুদ্ধ। অবরুদ্ধ গাজার শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা তাদের নিয়তি। এছাড়া ফিলিস্তিনের পাসপোর্টধারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এটিও বড় সমস্যা হয়ে সামনে আসছে।
মরিয়ম বলেন, সেই মুহূর্তটির কথা তিনি কখনও ভুলতে পারবেন না, যখন তাঁকে পূর্ণ অর্থায়নের মাধ্যমে পিএইচডি করার সুযোগ দিয়ে ইমেইলে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি শরণার্থী শিবিরের তাঁবুতে ফিরে সন্তানদের জড়িয়ে ধরি। তাদের খুশির সংবাদ জানাই, ভেবেছিলেন এই দুঃস্বপ্নের বুঝি শেষ হতে যাচ্ছে!’