সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রে ৭ লাখেরও বেশি কর্মী ছাঁটাইয়ের শঙ্কা

শুক্রবার, অক্টোবর ৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই দু’দিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে বলে সতর্ক করেছে হোয়াইট হাউস। সাত বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার অচলাবস্থায় পড়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। কংগ্রেসে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় শাটডাউনের দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে দুই দল।

গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতের মধ্যে নতুন ব্যয় পরিকল্পনায় একমত হতে ব্যর্থ হন কংগ্রেসের সদস্যরা। পরদিন থেকে শুরু হয় শাটডাউন। এরপর দ্রুত সমাধান বের করার প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি টিকে থাকেনি। শুক্রবার এ নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়ার কথা রয়েছে।

বর্তমানে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের কার্যক্রম স্থগিত, যা সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ার শঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে। এতে লাখো ফেডারেল কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন এবং অর্থনীতিতে শত শত কোটি ডলার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বুধবার বিকালে হোয়াইট হাউসে ব্রিফিংয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট যৌথভাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। ভ্যান্স অভিযোগ করেন, ডেমোক্র্যাটরা ‘রাজনৈতিক খেলা’ খেলছে। তার দাবি, জনগণের ক্ষতি না চাইলে তাদের এখনই সমঝোতায় রাজি হয়ে সরকারের কার্যক্রম চালু করতে হবে।

অন্যদিকে লেভিট বলেন, ছাঁটাই কার্যক্রম দ্রুতই শুরু হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি জানান, ‘দুই দিনের মধ্যে, একেবারেই শিগগির।’ তিনি আরও বলেন, ‘কখনো কখনো এমন কিছু করতে হয়, যা করতে চাই না। কিন্তু এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে ডেমোক্র্যাটরাই।’

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, শাটডাউন দীর্ঘায়িত হলে তিনি ডেমোক্র্যাটদের বিষয়ে স্থায়ী কাটছাঁটের সুযোগ নেবেন। প্রশাসন এ সময় নিউইয়র্কের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ১৮ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন আটকে দেওয়ারও ঘোষণা দেয়- যা মূলত ডেমোক্র্যাট নেতাদের রাজনৈতিক ঘাঁটি।

এরই মধ্যে সিনেটের ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার অভিযোগ করেছেন, রিপাবলিকানরা জোর করে তাদের ব্যয় পরিকল্পনা চাপিয়ে দিতে চাইছে। ডেমোক্র্যাটদের দাবি, নতুন পরিকল্পনায় স্বাস্থ্যসেবার অতিরিক্ত তহবিল নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু রিপাবলিকানরা বলছে, অন্তত নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত বিদ্যমান অর্থায়ন অব্যাহত রেখে সরকার সচল রাখা জরুরি।

সিনেটর ক্রিস মারফি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকার তখনই খুলবে, যখন রিপাবলিকানরা গুরুত্ব দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনা করবে।’ তবে রিপাবলিকানরা পাল্টা যুক্তি দিচ্ছে- স্বাস্থ্যসেবার সম্প্রসারণ মানে করদাতাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়, যা তারা সমর্থন করে না।

এ পরিস্থিতিতে ‘আবশ্যিক কর্মী’ যেমন সেনা ও সীমান্তরক্ষীরা বেতন ছাড়াই কাজ চালিয়ে যাবেন। অন্যদিকে ‘অপ্রয়োজনীয় কর্মী’ বেতন ছাড়া ছুটিতে পাঠানো হবে। অতীতে শাটডাউন শেষে তাদের বকেয়া পরিশোধ করা হলেও এবার ব্যাপক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এবারকার সংকট ২০১৮ সালের তুলনায় অনেক বড় প্রভাব ফেলবে। তখন কংগ্রেস আংশিক ব্যয় বিল পাস করতে পেরেছিল। এবার প্রায় ৪০ শতাংশ ফেডারেল কর্মী- অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ অস্থায়ী ছুটিতে যেতে পারেন।

কিছু কর্মীকে ইতিমধ্যেই ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসে ভ্যান্স আরও কঠোর সতর্কতা দিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বললে, পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে আমাদের ছাঁটাই করতেই হবে।’