মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্র থেকে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি পরিয়ে ভারতে ফেরত পাঠানো হলো ৫০ তরুণকে

মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

যুক্তরাষ্ট্রে উন্নত জীবনের আশায় জমি বিক্রি, ঘর বন্ধক রেখে এবং এজেন্টদের বিশ্বাস করে তাঁরা দেশ ছেড়েছিলেন। তাঁদের সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। অবৈধভাবে বসবাস করা এসব ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। রবিবার ভোরে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যের ২৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ৫০ তরুণকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। এ সময় তাঁদের হাতে হাতকড়া ও পায়ে বেড়ি ছিল।

রাজ্য প্রশাসনের তথ্যমতে, তাদের মধ্যে ১৬ জন কারনাল, ১৪ জন কাইথাল, ৫ জন কুরুক্ষেত্র, এবং ১ জন পানিপথ জেলার বাসিন্দা। তারা সবাই ‘ডানকি রুট’ ধরে দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার দেশগুলো পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। কেউ কেউ সেখানে কয়েক বছর ছিলেন, আবার কেউ মাত্র কয়েক মাস। কেউ আবার ফেরত পাঠানোর আগে কারাভোগও করেছেন।

কারনালের রাহরার ২৬ বছর বয়সী অঙ্কুর সিং জানান, ২০২২ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে তার প্রায় ২৯ লাখ রুপি খরচ হয়। চার মাসের দীর্ঘ যাত্রায় তিনি দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশ পাড়ি দেন। তিনি বলেন, ‘সব ঠিকঠাকই চলছিল, কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে একটি মদের দোকানে কাজ করার সময় ধরা পড়ি।’

এরপর আটক কেন্দ্রে রাখা হয় তাকে এবং গত ২৪ অক্টোবর ভারতে ফেরত পাঠানো হয়। এই ফ্লাইটে হরিয়ানার পাশাপাশি পাঞ্জাব, হায়দরাবাদ, গুজরাট ও গোয়া থেকেও কয়েকজন তরুণ ছিলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৫০০ ভারতীয় নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আটটি সামরিক, চার্টার্ড ও বাণিজ্যিক ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের অধিকাংশই পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও গুজরাটের বাসিন্দা।

ফেরত আসাদের মধ্যে ছিলেন হরিয়ানার ঘোরাউন্দা ব্লকের হুসন (২১)। তিন বোনের একমাত্র ভাই হুসনের যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রার জন্য পরিবারকে ৪৫ লাখ রুপি দিতে হয় এজেন্টদের। তার কাকা সুরেন্দর সিং বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছার পরপরই হুসন ধরা পড়ে। পরিবার জমি বিক্রি করেছিল, কিন্তু সবই বৃথা গেল।’

একইভাবে কারনালের কালসী গ্রামের শ্রমজীবী পরিবার থেকে আসা হরিশ এসসি ২০২৩ সালে কর্মী ভিসায় কানাডা গিয়ে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। সেখানে দোকানে কাজ করার সময় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তাকেও আটক করা হয়।

কাইথাল জেলার তারাগড় গ্রামের নরেশ কুমার এক বছরেরও বেশি সময় আটক থাকার পর ভারতে ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘ফ্লাইটে ওঠানোর সময় আমাদের হাতকড়া পরানো হয়, তবে কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি। আমি সেখানে ১৪ মাস জেলে ছিলাম।’

তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাতে তাকে ৫৭ লাখ ৫০ হাজার রুপি দিতে হয় এজেন্টদের, যারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কম খরচে পাঠানোর। সেই টাকা জোগাতে পরিবারকে জমি বিক্রি ও ধার করতে হয়েছে।

কাইথালের পুলিশ সুপার উপাসনা জানান, জেলার ১৪ জন তরুণকে দিল্লি থেকে রোববার বিকেলে আনা হয়। তাদের মধ্যে একজন আবগারি মামলার পলাতক আসামি ছিলেন। জিন্দ জেলার এসপি কুলদীপ সিং জানান, তার জেলার তিনজন তরুণও ফেরত এসেছেন এবং তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।