প্রতিদিন ব্যায়াম করলে এবং শরীরকে সক্রিয় রাখলে ক্যালোরি খরচ হয়। এটি বিশেষভাবে পেটের চর্বি কমাতে সাহায্য করে থাকে। আর নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইক্লিং, সাঁতার কিংবা যোগব্যায়াম শুধু চর্বি কমায় না, বিপাকক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে থাকে। সেই সঙ্গে ব্যায়াম মাংসপেশি শক্তিশালী করে এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখে। আর পেটের চর্বি কমলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকিও কমে যায়।
এতে বাড়তে থাকা পেটের চর্বি কমাতে অনেকে জিমের শরণাপন্ন হন। আবার অনেকে এ বিষয়টিকে খুব একটা পাত্তাই দেন না। অথচ পেটের এই অরিরিক্ত চর্বি সাধারণভাবে ‘বেলি ফ্যাট’, ‘টামি ফ্যাট’ কিংবা ‘বিয়ার বেলি’ নামে পরিচিত। যারা নিজেদের চেহারা ও ফিটনেসের ব্যাপারে সচেতন, তারা এ নিয়ে বেশ চিন্তিত থাকেন।
আর পেটের চারপাশে চর্বি বেড়ে গেলে মানুষ তার ইচ্ছেমতো আরাম করে পোশাক পরতে পারেন না। তবে পেটের চর্বির প্রভাব শুধু পছন্দের পোশাক পরার মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে না। এ চর্বি নানা দিক থেকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ঘুম কম হলে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোনের ওপর প্রভাব পড়ে। ফলে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, মানসিক চাপের কারণে রক্তে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই মানসিক চাপ নেওয়া যাবে না ও মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে হবে। এই মানসিক চাপের সময় মানুষ খাবারের প্রতি কম মনোযোগী থাকে এবং মন অন্যদিকে সরাতে অস্বাস্থ্যকর কিছু খেয়ে ফেলে।
পেটের চর্বি কমাতে যেসব বিষয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত

১. ঘুমানোর আগে অন্তত দুই থেকে তিন ঘণ্টা কিছু খাওয়া যাবে না।
২. দিনে যেসব খাবার খাওয়া হয়, শরীর সেগুলোর ক্যালোরি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে ও শক্তি উৎপাদন করে। তবে রাতের খাবারের পর আর এগুলো ব্যবহৃত হয় না। ফলে সেগুলো চর্বি হিসেবে জমে যায় এবং ওজন বাড়তে শুরু করে।
সুষম খাদ্যগ্রহণ

বিশেষজ্ঞরা বলেন, খাবারে বেশি ফাইবার থাকলে দীর্ঘ সময় পেট ভরা থাকে। ফাইবারযুক্ত খাবার পাকস্থলীতে দীর্ঘসময় থাকে এবং অন্ত্রে খাবার যাওয়ার গতি ধীর করে দেয়। এতে ক্ষুধা কম লাগে এবং বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। তাই খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন রাখতে হবে।
আর প্রোটিন দীর্ঘসময় পেট ভরা রাখে, ক্ষুধা কমায় এবং ক্ষুধা বাড়ানো হরমোনের মাত্রা কমায়। প্রোটিন মাংসপেশি শক্তিশালী করে এবং বিপাকক্রিয়াকেও ত্বরান্বিত করে, যা ক্যালোরি পোড়ানোর ক্ষমতা বাড়ায়। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিম, ডাল, দুধ, পনির, দই, মাছ, মুরগি ও সয়া জাতীয় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখা যেতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক, পেটের চর্বি থেকে যেসব রোগ হয়

পেটের চর্বি উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে অতিরিক্ত শর্করা ও কোলেস্টেরলের সমস্যার মতো গুরুতর কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এটি টাইপ-টু ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়ায়।
এ বিষয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে— পেটের চর্বি শরীরে ‘সাইটোকাইন’ নামক এক ধরনের প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ায়, যা শরীরে প্রদাহ তৈরি করতে পারে।
এ ছাড়া বেলি ফ্যাট ‘অ্যাঞ্জিওটেনসিন’ নামক আরেকটি প্রোটিনের উৎপাদনও বাড়ায়। এই প্রোটিন আবার রক্তনালিকে সংকুচিত করে এবং রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। এর পাশাপাশি এ চর্বি থেকে ডিমেনশিয়া, হাঁপানিসহ বড় ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
দিল্লির ফোর্টিস এসকর্টস হাসপাতালের সিনিয়র কার্ডিওলজিস্ট ডা. শিব কুমার চৌধুরী বলেন, পেটে জমে থাকা চর্বি শরীরের অন্য অংশের চর্বির চেয়ে অনেক বেশি বিপজ্জনক।
তিনি বলেন, যখন পেটের চর্বির কোষ ভেঙে যায়, তখন সেখান থেকে নানা ধরনের বিষাক্ত উপাদান বের হয়। এগুলো হৃৎপিণ্ডের ধমনীতে প্রদাহ বাড়ায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। এটি শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধও বাড়িয়ে দেয়। এতে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পেটের চর্বি বাড়ার পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন— জেনেটিক বৈশিষ্ট্য, হরমোনজনিত পরিবর্তন, বয়স, অতিরিক্ত ওজন এবং মেনোপজ। এ ছাড়া অনিয়মিত জীবনযাপন, অগোছালো রুটিন এবং অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসও এর জন্য দায়ী।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুষম খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণের মাধ্যমে সময়মতো পেটের চর্বি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
যেসব প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত
সাদা পাউরুটি, চিপস ও ক্র্যাকার্সে প্রায় কোনো ফাইবার থাকে না। ফলে এগুলো দ্রুত হজম হয় এবং হঠাৎ রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এভাবে এগুলো রক্তে শর্করার দ্রুত ওঠানামা ক্ষুধা বৃদ্ধি করে এবং ওজন বাড়ায়। এর পাশাপাশি এগুলো টাইপ-টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তৈরি করে। তাই এসবের বদলে হোল গ্রেইন পাউরুটি, শুকনো তাপে বা ওভেনে বানানো নাস্তা, ফল ও বাদামের মতো স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। চিনি ও ক্যালোরি-সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলার পাশাপাশি কম অ্যালকোহল গ্রহণ করতে হবে। আর ধূমপানকে সম্পূর্ণভাবে না বলতে হবে।