ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছেন। আগস্টে এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন অবশ্যই, আমি এই ধারণায় বিশ্বাস করি। এ মন্তব্য আঙ্কারায় কেবল প্রতীকী হিসেবেই বিবেচিত হয়নি, বরং এটিকে তুরস্কের আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আল জাজিরাকে বলেন, গ্রেটার ইসরাইলের লক্ষ্য হলো—এই অঞ্চলের দেশগুলোকে দুর্বল, অকার্যকর এবং বিভক্ত করে রাখা।
এই প্রেক্ষাপটে, ইসরাইল শুধু গাজা বা পশ্চিম তীরেই নয়—সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি তিউনিসিয়ায় গাজায় প্রেরিত সাহায্য বহরে হামলা চালিয়েছে। পাশাপাশি, ইরানের ওপর সামরিক হামলায় প্রবলভাবে অংশ নিয়েছে।
আঞ্চলিক আধিপত্য: সংঘাতের মূল রূপরেখা
ইসরাইলকে আঞ্চলিক একচ্ছত্র শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে প্রবণতা, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে জুলাইয়ে, যখন যুক্তরাষ্ট্রে তুরস্কের দূত ও সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাক স্বীকার করেন, ইসরাইল একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সিরিয়া চায় না।
সিরিয়ার ওপর একাধিক হামলা, লেবাননের দক্ষিণে হিজবুল্লাহ নেতৃত্বে আঘাত, এবং ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধ—সবই ইঙ্গিত দেয় যে, ইসরাইল আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের একে একে দুর্বল করতে চাইছে।
পরবর্তী সংঘর্ষের ক্ষেত্র: সিরিয়া?
সাবেক তুর্কি নৌ-অ্যাডমিরাল এবং ‘ব্লু হোমল্যান্ড’ কৌশলের রূপকার সেম গুরদেনিজ বলেছেন, তুরস্ক ও ইসরাইলের প্রথম সংঘর্ষের ক্ষেত্র হতে পারে সিরিয়ার স্থল ও আকাশসীমা।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় গ্রিস, গ্রিক সাইপ্রাস ও ইসরাইলের সমন্বয়ে সাইপ্রাসে যে সামরিক ও গোয়েন্দা ঘাঁটি শক্তিশালী হচ্ছে, তা তুরস্কের ব্লু হোমল্যান্ড নীতিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
তুরস্ক ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। ‘গ্রেটার ইসরাইল’ ধারণা, কাতারে ইসরাইলি হামলা, সিরিয়ায় আঞ্চলিক কর্তৃত্বের প্রতিযোগিতা—সব মিলিয়ে আঙ্কারার চোখে এখন ইসরাইল একটি আগ্রাসী ও একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে পরিচালিত শক্তি। তুরস্ক, তার সামুদ্রিক ও আঞ্চলিক কৌশল নিয়ে, এই আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।