বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

যে ৫ কারণে সারাক্ষণ শরীর ক্লান্ত লাগে

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
শরীর

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কি মনে হয় শরীরটা ক্লান্ত লাগছে? অফিসে বসেই চোখে আসে হাই, আর বাসায় ফিরেই কিছু করার মতো এনার্জি থাকে না? অথচ বিশেষ ভারী কোনো কাজও করছেন না—তবু সারাদিন ধরে শরীরে ক্লান্তি ভর করে থাকে।

বর্তমানের ব্যস্ত ও অগোছালো জীবনযাপনে ক্লান্তি খুব সাধারণ বিষয় মনে হলেও, বিশেষজ্ঞরা বলছেন—প্রতিদিন যদি একইভাবে ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটি অবহেলা করার মতো বিষয় নয়। অনেক সময় এর পেছনে থাকে এমন কিছু কারণ, যেগুলো আমরা বুঝতেও পারি না।

যে ৫টি কারণে প্রায়ই ক্লান্তি লেগতে পারে

১. অনিয়মিত খাওয়া-দাওয়া

শরীর চালাতে যে জ্বালানি দরকার, তা আসে খাবার থেকে। কিন্তু অনেকেই সকালে নাস্তা বাদ দিয়ে সরাসরি অফিসে চলে যান, দুপুরে শুধু বিস্কুট-চা খেয়ে সারেন বা রাতের খাবার অনেক দেরিতে খান। আবার কারও ক্ষেত্রে খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো সময়ই থাকে না—যখন যা সামনে আসে, তখন তাই খেয়ে নেন।

ফলে শরীর ঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায় না। রক্তে শর্করার ওঠানামা শুরু হয়, আর তখনই এনার্জি কমে গিয়ে ক্লান্তি চেপে বসে। প্রতিদিন নিয়ম করে অন্তত ৩ বেলা সুষম খাবার এবং মাঝেমধ্যে ১–২ বেলা হালকা নাশতা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

২. মানসিক চাপ বা স্ট্রেস

অফিসের কাজের চাপ, পড়াশোনার চিন্তা, পারিবারিক সমস্যা কিংবা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা—এসব মানসিক চাপ শুধু মনের ওপর নয়, শরীরের ওপরও প্রভাব ফেলে। দীর্ঘ সময় স্ট্রেসে থাকলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়, মাথা ব্যথা, হজমের সমস্যা এমনকি মাংসপেশি শক্ত হয়ে যাওয়া দেখা দেয়। এগুলো মিলিয়েই তৈরি হয় সারাক্ষণের ক্লান্তি। প্রতিদিন অন্তত কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, হাঁটা বা পছন্দের শখের কাজ করলে মন ভালো থাকবে, শরীরও থাকবে হালকা।

৩. পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া

রাতের ঘুম এখন অনেকের কাছেই বিলাসিতা। ফোন, টিভি, ল্যাপটপ বা কাজের চাপের কারণে ঘুম কমে যাচ্ছে। অথচ ঘুম কম হলে শুধু ক্লান্তি নয়, বিরক্তি, মন খারাপ, মনোযোগের ঘাটতি এমনকি ভুলে যাওয়ার প্রবণতাও বাড়ে। প্রতিদিন কমপক্ষে ৭–৮ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের চেষ্টা করুন। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে স্ক্রিন (মোবাইল/কম্পিউটার/টিভি) বন্ধ করে দিন। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো এবং ওঠার অভ্যাসও কার্যকর।

৪. ওজন বেশি থাকা

শরীরে অতিরিক্ত ওজন মানেই বেশি চাপ। হাঁটা, সিঁড়ি ভাঙা বা দৈনন্দিন যেকোনো কাজেই সাধারণ ওজনের মানুষের তুলনায় বেশি এনার্জি খরচ করতে হয়। এর ফলে দ্রুত ক্লান্তি চলে আসে। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম শুরু করুন, যেমন হাঁটা বা সাইক্লিং। খাবারে ভাজা, তেল-চর্বি কমিয়ে সুষম খাবারের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ধীরে ধীরে ওজন কমলে ক্লান্তিও কমে যাবে।

৫. ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার ভারসাম্যহীনতা

ডায়াবেটিসের অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো বারবার ক্লান্তি অনুভব করা। যখন রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে না, তখন শরীরের কোষগুলো প্রয়োজনীয় এনার্জি পায় না। ফলে সহজ কাজেও দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়া স্বাভাবিক। যদি ক্লান্তির পাশাপাশি ওজন কমা, ঘন ঘন প্রস্রাব, অতিরিক্ত তেষ্টা পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ থাকে—তাহলে অবশ্যই রক্তে শর্করা পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

শেষ কথা

ক্লান্তি এক দিনের সমস্যা হলে তেমন গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু যদি প্রতিদিন, প্রায় সারাক্ষণ শরীর ভারী লাগে, কাজের আগ্রহ না থাকে—তাহলে এটি শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা কোনো সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।

তাই অবহেলা না করে জীবনযাপনে নিয়ম-কানুন মেনে চলুন, পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন, পুষ্টিকর খাবার খান এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন। তবেই ধীরে ধীরে ক্লান্তি কমে গিয়ে শরীর ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক এনার্জি।