মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাবে হানা দিতে পারে যেসব রোগ

রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
শরীরে

শরীর সুস্থ রাখার জন্য ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবারের বিকল্প নেই। এর মধ্যে ক্যালসিয়াম হলো অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। আমাদের হাড় ও দাঁতের শক্তি, মাংসপেশির স্বাভাবিক কার্যক্রম, স্নায়ুতন্ত্রের বার্তা আদান–প্রদান, হৃদপিণ্ডের সঠিক ছন্দ বজায় রাখা এবং হরমোন নিঃসরণ—সবকিছুর সঙ্গেই ক্যালসিয়ামের সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকেই মনে করেন ক্যালসিয়াম কেবল হাড়ের জন্য প্রয়োজন। কিন্তু বাস্তবে এর ঘাটতি শরীরের নানা জটিল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে নারীদের জীবনে বয়স বাড়ার সঙ্গে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। মেনোপজের পর হাড় দুর্বল হয়ে পড়া, অস্টিওপরোসিস বা হাড় সহজে ভেঙে যাওয়া, দাঁতের সমস্যা ইত্যাদি ক্যালসিয়ামের অভাবের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।

শরীরে কেন ক্যালসিয়ামের অভাব হয়?

খাদ্যাভ্যাসে অনিয়ম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার না খাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে ভিটামিন ডি-র অভাব, ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ, হরমোনজনিত সমস্যা কিংবা বয়সজনিত কারণে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে সঠিক খাবার না খাওয়ায় এটি হাড়ের গঠনে বাধা সৃষ্টি করে, আর প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি ধীরে ধীরে দুর্বলতা ও হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

ক্যালসিয়ামের ঘাটতির লক্ষণ ও রোগসমূহ

১. মাংসপেশির টান বা খিঁচুনি

হঠাৎ করে পায়ে বা হাতে টান ধরা, ব্যথা বা খিঁচুনি দেখা দেওয়া ক্যালসিয়ামের অভাবের অন্যতম লক্ষণ। নিয়মিত এ ধরনের সমস্যা হলে অবশ্যই সতর্ক হতে হবে।

২. অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন

হৃদয়ের সঠিক স্পন্দন বজায় রাখতে ক্যালসিয়াম অপরিহার্য। এর ঘাটতি হলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যায়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। চিকিৎসকেরা একে মারাত্মক সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখেন।

৩. অতিরিক্ত ক্লান্তি ও অলসতা

যথেষ্ট বিশ্রাম নেওয়ার পরও যদি সবসময় অবসাদ, ক্লান্তি বা ঘুমঘুম ভাব অনুভূত হয়, তবে তার পেছনে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকতে পারে। অনেকেই একে সাধারণ অবস্থা ভেবে এড়িয়ে যান, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

৪. নখ দুর্বল হয়ে যাওয়া

নারীদের মধ্যে নখ পাতলা হয়ে যাওয়া, সহজে ভেঙে যাওয়া বা নখে দাগ পড়া সাধারণ সমস্যা। এগুলো শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির ইঙ্গিত দিতে পারে।

৫. দাঁতের সমস্যা

দাঁত মূলত হাড়জাতীয় টিস্যু দিয়ে তৈরি। তাই ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দাঁতে ব্যথা, ক্ষয়, সংবেদনশীলতা কিংবা দাঁত নড়বড়ে হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার জন্ম দেয়।

৬. অস্টিওপোরোসিস ও হাড় ভাঙার ঝুঁকি

দীর্ঘদিন ধরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি থাকলে হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। ফলে অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যেতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বিশেষত নারীরা এই ঝুঁকিতে বেশি।

৭. স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা

স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা অনেকাংশে ক্যালসিয়ামের ওপর নির্ভরশীল। অভাবে হাত-পায়ে ঝিনঝিন ভাব, মাথা ঘোরা বা মনোযোগের ঘাটতির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

  • ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারী ও পুরুষ
  • মেনোপজ-উত্তর নারীরা
  • যারা নিয়মিত দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খান না
  • দীর্ঘমেয়াদি কিডনির রোগী
  • ধূমপায়ী ও অ্যালকোহলসেবী ব্যক্তিরা
  • প্রতিরোধ ও করণীয়
  • শরীরের ক্যালসিয়াম ঘাটতি পূরণে সঠিক খাদ্যাভ্যাসই প্রধান উপায়।
  • প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় দুধ, দই, পনির অন্তর্ভুক্ত করুন।
  • পালং শাক, কেল শাক, ব্রকোলি ও অন্যান্য সবুজ শাকসবজি খান।
  • বাদাম, তিল, সয়া, মসুর ডাল ও শিমজাতীয় খাদ্য ক্যালসিয়ামের ভালো উৎস।

রোদে কিছুক্ষণ সময় কাটানো ভিটামিন ডি সরবরাহ করে, যা ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।

প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

উপসংহার

ক্যালসিয়ামের ঘাটতি শুরুতে তেমন চোখে পড়লেও দীর্ঘমেয়াদে এটি হাড়, দাঁত, স্নায়ুতন্ত্র ও হৃদপিণ্ডসহ পুরো শরীরকে দুর্বল করে ফেলে। তাই অল্প বয়স থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে ক্যালসিয়ামজনিত রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন, শরীরের যেকোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন অবহেলা না করে দ্রুত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।