ওজন কমানো আজকাল অনেকের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ। অনেকেই মনে করেন, মেদ কমাতে গেলে অবশ্যই জিমে গিয়ে ঘাম ঝরাতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জিমে না গিয়েও সঠিক লাইফস্টাইল অনুসরণ করে শরীরের বাড়তি মেদ কমানো সম্ভব। এজন্য দরকার নিয়ম মেনে চলা, শৃঙ্খলা আর ডেডিকেশন।
ফিটনেস ট্রেইনারদের মতে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাসই মেদ জমার বড় কারণ। এগুলো এড়াতে পারলে সহজেই শরীর ফিট রাখা সম্ভব। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই ছয়টি প্রধান কারণ এবং সমাধান।
শরীরে মেদ জমার ৬ কারণ
১. শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা
অতিরিক্ত অলস জীবনযাপন মেদ জমার সবচেয়ে বড় কারণ। সারাদিন অফিস বা পড়াশোনার কাজে বসে থাকা, হাঁটাহাঁটি না করা, সিঁড়ির পরিবর্তে লিফট ব্যবহার করা—এসব কারণে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালোরি জমতে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার স্টেপ হাঁটা উচিত। হাঁটা শুধু ক্যালোরি পোড়ায় না, বরং হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসকেও সক্রিয় রাখে।
২. মানসিক চাপ বা স্ট্রেস

মানসিক চাপ থাকলে মানুষ বেশি খেতে থাকে, বিশেষত অস্বাস্থ্যকর খাবার। একই সঙ্গে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা সরাসরি পেটের মেদ বাড়ায়। এজন্য ফিটনেস বিশেষজ্ঞরা প্রতিদিন কিছুটা সময় মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও ব্রিদিং প্র্যাকটিসে দিতে বলছেন। এতে মন শান্ত হয়, স্ট্রেস কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৩. হজমের সমস্যা

পেট ভালো না থাকলে খাওয়ার পুষ্টি ঠিকভাবে শরীরে শোষিত হয় না। এতে মেটাবলিজম ব্যাহত হয় এবং মেদ জমতে শুরু করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার—যেমন ফলমূল, শাকসবজি, ডাল। পাশাপাশি প্রতিদিন এক বাটি দই খেলে হজমশক্তি বাড়ে, কারণ এতে থাকা প্রোবায়োটিক অন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
৪. সময়মতো খাবার না খাওয়া
অনেকেই ব্যস্ততার কারণে খাবারের সময় মেনে চলেন না। কখনো একেবারেই না খেয়ে থাকেন, আবার কখনো একসাথে বেশি খান। এতে শরীরের মেটাবলিজম নষ্ট হয়ে যায়, ফলে অতিরিক্ত মেদ জমতে থাকে। এজন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে পরিমাণমতো খাবার খাওয়া জরুরি। অল্প অল্প করে দিনে কয়েকবার খেলে শরীর প্রয়োজনীয় শক্তি পায়, আবার চর্বিও জমে না।
৫. হরমোনের ভারসাম্যের অভাব
শরীরের হরমোন ঠিক না থাকলে মেটাবলিজম কমে যায়। বিশেষত থাইরয়েড বা ইনসুলিনের সমস্যা থাকলে দ্রুত মেদ জমে। এজন্য হরমোনজনিত কোনো সমস্যা আছে কিনা তা পরীক্ষা করানো দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লাইফস্টাইল পরিবর্তন ও সঠিক চিকিৎসা নিলে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
৬. পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া

অনেকেই সারা দিনে খুব অল্প পানি পান করেন। অথচ পানি বিপাক প্রক্রিয়া বা মেটাবলিজম সক্রিয় রাখার জন্য অত্যন্ত জরুরি। শরীরে পানির অভাবে বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, ফলে মেদ জমা শুরু হয়। তাই প্রতিদিন অন্তত ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। পানি শরীরের টক্সিন দূর করে, হজম ভালো রাখে এবং ওজন কমাতেও সাহায্য করে।
শেষকথা
ওজন কমাতে শুধু কঠিন শরীরচর্চা বা জিমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটানোর প্রয়োজন নেই। বরং সঠিক জীবনযাপন, সময়মতো খাবার, পর্যাপ্ত ঘুম, প্রচুর পানি পান আর মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করাই হতে পারে কার্যকর সমাধান। তাই শৃঙ্খলিত লাইফস্টাইলকে অভ্যাসে পরিণত করুন, তাহলেই মেদ কমানো সহজ হবে।

