বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি, নাহলে হতে পারে ক্ষতি

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
সানস্ক্রিন ব্যবহার

ত্বকে সানস্ক্রিন ব্যবহার এখন ছেলে-মেয়ে সবার কাছে প্রয়োজনীয় একটি জিনিস। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বকে বাঁচাতে শুধু বাইরে নয়, এখন চিকিৎসকরা বাড়ির মধ্যেও সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে সমস্যা হলো, সানস্ক্রিন অনেক রকমের পাওয়া যায়। শুধু এসপিএফ দেখেই কিনে ফেললে চলবে না।

কিন্তু সমস্যা হলো—বাজারে অসংখ্য ব্র্যান্ড, ধরণ ও ভিন্ন ভিন্ন বেসের (জেল, ওয়াটার, ক্রিম) সানস্ক্রিন পাওয়া যায়। অনেকেই কেবল এসপিএফ (SPF) দেখে কিনে ফেলেন, কিন্তু ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক বেস নির্বাচন না করলে উপকারের বদলে উল্টো ক্ষতি হতে পারে।

ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন ব্যবহার জরুরি

চলুন জেনে নিই, ভুল সানস্ক্রিন ব্যবহারে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং কোন ত্বকের জন্য কেমন সানস্ক্রিন উপযুক্ত।

তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বাড়তে পারে

যাদের ত্বক স্বাভাবিকভাবেই তৈলাক্ত, তাদের জন্য ভারী বা তেলতেলে সানস্ক্রিন একেবারেই অনুপযুক্ত। এসব সানস্ক্রিন ত্বকের রোমকূপ বন্ধ করে দেয়, ফলে ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস বা হোয়াইটহেডস বেড়ে যায়। বিশেষ করে ওয়াটারপ্রুফ ও ঘন ক্রিম বেস সানস্ক্রিন তৈলাক্ত ত্বকে সহজেই সমস্যা তৈরি করতে পারে। এ ধরনের ত্বকের জন্য হালকা জেল বা ওয়াটার বেস সানস্ক্রিন ব্যবহার করাই উত্তম।

অ্যালার্জির ঝুঁকি

সানস্ক্রিনে ব্যবহৃত কিছু রাসায়নিক উপাদান, যেমন—‘অক্সিবেনজোন’, ‘অ্যাভোবেনজোন’, বা ‘অক্টোক্রিলিন’ সংবেদনশীল ত্বকে অ্যালার্জি, চুলকানি বা লালচে ফুসকুড়ির কারণ হতে পারে। যাদের ত্বক খুব স্পর্শকাতর, তারা প্রথমে অল্প পরিমাণ সানস্ক্রিন হাতে বা কানের পাশে ব্যবহার করে দেখে নেবেন কোনো প্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা। সমস্যা দেখা দিলে অবিলম্বে সেই পণ্য ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

চোখে জ্বালা বা অস্বস্তি

সানস্ক্রিন মুখে মাখার সময় চোখে যাতে না যায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। রাসায়নিক সানস্ক্রিন চোখে গেলে তীব্র জ্বালা, পানি পড়া বা লালচে ভাব হতে পারে। অনেক সময় ঘামের সঙ্গে সানস্ক্রিন গড়িয়ে চোখে ঢুকলেও একই সমস্যা দেখা দেয়। তাই চোখের চারপাশে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে মিনারেল বেসড সানস্ক্রিন বেছে নিতে পারেন।

শুষ্ক ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা

অনেক সানস্ক্রিনে অ্যালকোহল থাকে, যা শুষ্ক ত্বককে আরও বেশি ডিহাইড্রেট করে ফেলে। ফলে ত্বক খসখসে হয়ে যায়, টান পড়ে এবং অস্বস্তি তৈরি হয়। যাদের ত্বক এমনিতেই শুষ্ক, তারা ময়েশ্চারাইজিং উপাদানসমৃদ্ধ ক্রিম বেস সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। এতে ত্বক সুরক্ষার পাশাপাশি আর্দ্রতাও বজায় থাকবে।

হরমোনে প্রভাব ফেলতে পারে

চিকিৎসকদের মতে, কিছু সানস্ক্রিনে থাকা ‘অক্সিবেনজোন’ নামের উপাদান শরীরের হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে গর্ভবতী নারী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের ক্ষেত্রে এই উপাদান এড়িয়ে চলা ভালো। তাই মিনারেল বা ন্যাচারাল বেসড সানস্ক্রিনই এ সময়ে নিরাপদ।

তাহলে কী করবেন?

  • ✔ প্রথমেই নিজের ত্বকের ধরন চিনে নিন—তৈলাক্ত, শুষ্ক, মিশ্র বা সংবেদনশীল।
  • ✔ তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জেল বা ওয়াটার বেস সানস্ক্রিন, শুষ্ক ত্বকের জন্য ক্রিম বেস সানস্ক্রিন উপযুক্ত।
  • ✔ সংবেদনশীল ত্বকে মিনারেল বেসড বা ফিজিক্যাল সানস্ক্রিন (যেমন জিঙ্ক অক্সাইড বা টাইটেনিয়াম ডাই-অক্সাইডযুক্ত) ব্যবহার করুন।
  • ✔ সর্বদা ব্রড-স্পেকট্রাম (UVA ও UVB সুরক্ষা) সানস্ক্রিন নিন এবং SPF কমপক্ষে ৩০ থাকা উচিত।
  • ✔ যদি আগে থেকেই ব্রণ, একজিমা বা অন্য কোনো ত্বকের রোগ থাকে, তবে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়েই সানস্ক্রিন নির্বাচন করা ভালো।

শেষ কথা

সানস্ক্রিন এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং ত্বকের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। তবে সঠিক ত্বকের ধরন অনুযায়ী উপযুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করলেই কেবল এর প্রকৃত সুফল পাওয়া যায়। ভুল নির্বাচন করলে ত্বকের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। তাই সচেতনভাবে পণ্য বাছাই করুন, প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং প্রতিদিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করে নিজের ত্বককে রাখুন সুস্থ, উজ্জ্বল ও সুরক্ষিত।