বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

সাব: ড. ইউনূসের সফর ঘিরে নিউইয়র্কে বিএনপি-আওয়ামী লীগে হাতাহাতি নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে থমথমে পরিস্থিতি

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতিসংঘের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে এগারো দিনের সফরে নিউইয়র্ক আসছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস। তার এ সফরকে ঘিরে  নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটিতে তৈরি হয়েছে এক ধরনের থমথমে পরিস্থিতি।

মিছিল, সভা, উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছ বিএনপি ও আওয়ামী লীগে নেতা-কর্মীদের মাঝে। রোববার নিউইয়র্কের ডাইভার্সিটি প্লাজায় ড. ইউনুসের পক্ষে বিপক্ষে বিএনপি আ.লীগের নেতাদের আলাদা আলাদা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পক্ষে-বিপক্ষের এ সমাবেশে উভয় পক্ষের সাধারণ কর্মীদের মাঝে তুমুল বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, লন্ডন থেকে আগত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন ও নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরীর সমঝোতার ভিত্তিতে ডাইভারসিটি প্লাজায় ড. ইউনূসের আগমন উপলক্ষে পক্ষে-বিপক্ষে এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। যদিও এর আগে নিউইয়র্কে ড. ইউনুসকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ। অপরদিকে প্রধান উপদেষ্টার সফর ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের তৎপরতার পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নেয় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা।

এদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাগত জানানো এবং প্রতিবাদ জানানোর জন্য সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) জেএফকে বিমানবন্দরে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ ও সমমনা সংগঠনের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। ড. ইউনূসকে স্বাগত জানাতে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এবং তার সমমনা সংগঠনগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো তার বিরুদ্ধে ‘যেখানে ইউনূস-সেখানেই প্রতিরোধ’ শীর্ষক তুমুল বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।

এ কারণে জেএফকে বিমানবন্দরে সম্ভাব্য বড় ধরনের অঘটনের আশঙ্কায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ কর্মসূচিতে যোগ দিতে ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, মিশিগান, শিকাগো, বস্টন, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, নিউজার্সি এবং কানেকটিকাট থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থকরা নিউইয়র্কে জড়ো হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক সামাদ আজাদ জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করবেন।

আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিদিন ড. ইউনূস যে হোটেলে অবস্থান করবেন, তার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন এবং কালো পতাকা প্রদর্শন করার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়াও, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে ড. ইউনূসের ভাষণের সময়ও বাইরে কালো পতাকা প্রদর্শন ও বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। অন্যদিকে, বিএনপি ড. ইউনূস ছাড়াও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আওয়ামী লীগের তৎপরতার পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতাকর্মীরা। জামায়াতে ইসলামীর দলীয় সংবিধান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র শাখা না থাকলেও বিভিন্ন নামে ঐক্যবদ্ধ আছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারাও স্বাগত জানাতে প্রস্তুত ড. ইউনুসকে।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য গিয়াস আহমেদ বলেন, এই অভ্যুত্থান দেশের মানুষ ও প্রবাসীদের চেষ্টার ফসল। বাংলাদেশ এবং প্রবাসের বিএনপির নেতাকর্মীরা ফ্যাসিবাদ পতনের জন্য একযোগে কাজ করেছে। সুতরাং এই সরকার আমাদের সরকার। সেই সরকারের প্রধান এবং বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য নেতাকর্মীকে শুভেচ্ছা চানাতে আমরা প্রস্তত। আমরা জাতিসংঘের অধিবেশনসহ সকল অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান করবো।

অপরদিকে আইনের আওতায় যতটা সম্ভব ড. ইউনূসকে লাঞ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ! যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রবাসী কল‍্যাণ সম্পাদক সোলেমান আলী বলেন, ড. ইউনূস ক্ষমতায় আসার পর সবাই ভেবেছিলো উনি আসার পর দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে। কিন্তু সেটা না হয়ে দেশের আরও ক্ষতিসাধন হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশ বিদেশের সবাই ক্ষুব্ধ। আমরা মারাত্বক আকারে প্রতিরোধ গড়ে তুলার জন্য সবাই প্রস্তুত আছি। আমাদের প্রত্যেকদিনের কর্মসূচি আছে। উনাকে যেখানেই পাই আইনের গতিতে আমরা  লাঞ্চিত করবো।

প্রসঙ্গত, সফরসূচি অনুযায়ী ড. ইউনুস ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছান।  প্রধান উপদেষ্টা ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন। তার ভাষণে জুলাই মাসের গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী গণতান্ত্রিক সংস্কার, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় এবং সাবেক স্বৈরাচারী শাসনপরবর্তী বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চিত্র তুলে ধরা হবে।

এ ছাড়া নিউইয়র্ক সফরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের সাইডলাইনে উচ্চপর্যায়ের কিছু বৈঠকে অংশ নেবেন ড. ইউনূস এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধান নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরবেন বলে জানা গেছে। তার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করেছে জাতিসংঘ।

৩০ সেপ্টেম্বর ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা হবে। এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতি নিজেই। প্রধান উপদেষ্টার ২ অক্টোবর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।