সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

হার্টের রোগের ঝুঁকি এড়াতে ৩০-এর পর পুরুষরা যা করবেন

শনিবার, সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
রোগের ঝুঁকি

হার্টের রোগের ঝুঁকি এড়াতে ৩০-এর পর পুরুষরা কিছু নিয়ম মেনে চলেতে পারে। হার্টের রোগে হৃৎপিণ্ড বা রক্তনালীর সাথে জড়িত বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা অন্তর্ভুক্ত, যেমন করোনারি ধমনী রোগ, হৃদরোগের সমস্যা (অ্যারিথমিয়া), হার্ট ফেইলিউর, এবং জন্মগত হার্টের ত্রুটি।

ঘর ও বাইরের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে পুরুষরা প্রায়ই নিজেদের স্বাস্থ্যকে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেন। পরিবারের সবার সুস্থতার খোঁজখবর রাখলেও নিজের শরীরের যত্নে অনীহা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। তবে বয়স ৩০ পার হওয়ার পর থেকেই শরীরে ভেতরে ভেতরে নানা পরিবর্তন শুরু হয়, যা উপেক্ষা করলে পরে বড় ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ক্যানসারের মতো জটিল অসুস্থতা এ সময় থেকে শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে।

চিকিৎসকদের মতে, ৩০-এর পর থেকেই পুরুষদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা এবং সুস্থ জীবনযাপনের অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। কারণ, এ সময় থেকেই হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।

হার্টের রোগের ঝুঁকি এড়াতে যা করতে পারে পুরুষরা

ধূমপান বন্ধ করা জরুরি

সিগারেট পুরুষদের সবচেয়ে বড় অদৃশ্য শত্রু। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যদি ধূমপান অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে শরীরকে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হয় প্রতিদিন। শুধু ক্যানসার নয়, ধূমপানের কারণে হার্ট অ্যাটাক, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোকসহ বহু রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই ৩০ পার হওয়া মানেই ধূমপান ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। যত দেরি করা হবে, ঝুঁকিও তত বাড়বে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা

আজকের ব্যস্ত জীবনে মানসিক চাপ যেন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসের কাজ, পরিবারিক দায়িত্ব, আর্থিক চাপ—সব মিলিয়ে মনের ওপর সৃষ্টি হয় অতিরিক্ত চাপ। দীর্ঘদিন ধরে এই স্ট্রেস থাকলে তা হৃদরোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই কাজের মাঝখানে বিরতি নেওয়া, পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, কিংবা প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখা খুবই জরুরি। প্রতিদিন মাত্র ১৫ মিনিট নিজের জন্য নিরিবিলি সময় নিলেও মানসিক চাপ অনেকটাই কমানো সম্ভব।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা]

শরীরে কোনো দৃশ্যমান সমস্যা না থাকলেও বছরে অন্তত একবার হেলথ চেকআপ করানো বাধ্যতামূলক। ৩০-এর পর থেকেই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়তে থাকে, আর ৪০ পার হওয়ার পর তা আরও তীব্র হয়। তাই নিয়মিত রক্তের শর্করা পরীক্ষা, রক্তচাপ পরীক্ষা ও ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করা দরকার। এছাড়া পুরুষদের প্রস্টেট ক্যানসারের ঝুঁকিও বেশি, তাই নির্দিষ্ট সময় পরপর প্রস্টেট স্ক্রিনিং করানো জরুরি।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস

অতিরিক্ত তেল, মিষ্টি, ফাস্টফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। তাই ৩০-এর পর থেকেই খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলমূল, আঁশযুক্ত খাবার এবং পর্যাপ্ত পানি থাকা উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত লবণ এড়িয়ে চলা, লাল মাংস কম খাওয়া এবং মাছ-ডাল-বাদাম বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।

ব্যায়ামের অভ্যাস

শরীরচর্চার বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, সাইকেল চালানো বা হালকা ব্যায়াম হার্টকে সুস্থ রাখে। ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে, রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে এবং রক্তে কোলেস্টেরলও কমে যায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায় উল্লেখযোগ্যভাবে।

ঘুম ও বিশ্রাম

অপর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য বড় শত্রু। নিয়মিত ঘুম কম হলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

শেষ কথা

৩০ পার হওয়া মানেই জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায় শুরু। এই সময় থেকেই শরীরের যত্ন না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়বে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান ত্যাগ, ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ ও পর্যাপ্ত ঘুম—এসব অভ্যাস তৈরি করলেই সুস্থ থাকা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, এখন থেকেই সচেতন না হলে পরবর্তীতে ক্ষতির বোঝা বহন করতে হবে নিজেকেই।