মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

হার্ট ভালো রাখে সহজ ৭ ব্যায়াম

মঙ্গলবার, আগস্ট ২৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
হার্ট

হার্টের সমস্যা বা হৃদরোগ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে এবং এগুলো অনেক সময় জীবনহানিকর হয়ে দাঁড়ায়। হার্ট আমাদের দেহের একটি মৌলিক অঙ্গ, যা রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের হৃদরোগ বা সমস্যা সাধারণত জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব ফেলে।

বর্তমান সময়ে ব্যস্ততা, মানসিক চাপ ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। বিশেষ করে অস্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান, ব্যায়ামের অভাব এবং অতিরিক্ত চাপ—এসব কারণে হার্টের ওপর বাড়তি চাপ পড়ে। তবে নিয়মিত কিছু সহজ ব্যায়াম করলে হৃদপিণ্ডকে শক্তিশালী রাখা যায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন সামান্য সময় ব্যায়ামে বিনিয়োগ করলে হার্টের স্বাস্থ্য অনেকাংশে সুরক্ষিত থাকে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া–র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখতে খুব জটিল ব্যায়াম নয়, বরং কিছু সহজ ব্যায়ামই যথেষ্ট কার্যকরী। এসব ব্যায়াম হৃদযন্ত্রের পেশি শক্তিশালী করে, রক্ত চলাচল উন্নত করে এবং শরীরের সামগ্রিক ফিটনেস বাড়ায়।

হার্ট ভালো রাখার জন্য সহজ ৭টি ব্যায়াম

১. হাঁটা

  • হাঁটা হলো সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম, যা প্রায় সব বয়সীদের জন্য উপযোগী।
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
  • এটি রক্ত চলাচল বাড়ায়, খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
  • অফিস শেষে, সকালে কিংবা সন্ধ্যায় যেকোনো সময় হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

২. দৌড়ানো

যারা হাঁটার চেয়ে কিছুটা বেশি পরিশ্রম করতে চান, তাদের জন্য দৌড়ানো চমৎকার বিকল্প।

হালকা দৌড়ানো বা জগিং হার্টের অ্যারোবিক ক্ষমতা বাড়ায়।

এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে, ফলে অক্সিজেন শরীরে ভালোভাবে পৌঁছায়।

গবেষণা বলছে, নিয়মিত দৌড়ানো হার্টের পেশি শক্তিশালী করে এবং হৃৎরোগের ঝুঁকি ৩০–৪০% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করে।

৩. সাইকেল চালানো

  • সাইকেল চালানোও একটি জনপ্রিয় কার্ডিও এক্সারসাইজ।
  • প্রতিদিন অন্তত ২০–৩০ মিনিট সাইকেল চালালে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে।
  • এটি ক্যালোরি বার্ন করে, শরীরের বাড়তি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • হার্ট ছাড়াও হাঁটু ও পায়ের মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে।
  • যারা বাইরে সাইকেল চালাতে পারেন না, তারা স্টেশনারি বাইক ব্যবহার করতে পারেন।

৪. সাঁতার

সাঁতার পুরো শরীরের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যায়াম।

পানিতে ভেসে থাকার কারণে জয়েন্টে চাপ পড়ে না, ফলে সবার জন্যই এটি নিরাপদ।

নিয়মিত সাঁতার কেটে হার্টের কার্যকারিতা বাড়ে এবং শ্বাসযন্ত্রও সুস্থ থাকে।

পাশাপাশি শরীরের ক্যালোরি খরচ হয় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে আসে।

সপ্তাহে অন্তত ২–৩ দিন আধাঘণ্টা সাঁতার কাটলে হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়ে।

৫. যোগব্যায়াম (Yoga)

  • যোগব্যায়াম শুধু শরীর নয়, মনেরও যত্ন নেয়।
  • এটি শরীরের নমনীয়তা বাড়ায় এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • মানসিক চাপ কমায়, যা হৃদরোগের একটি বড় কারণ।
  • মেডিটেশনসহ যোগব্যায়াম হৃদপিণ্ডকে শান্ত রাখে এবং স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • প্রতিদিন সকালে ২০ মিনিট যোগব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।

৬. ভার উত্তোলন (Strength Training)

অনেকে মনে করেন ভার উত্তোলন শুধু পেশি গঠনের জন্য, কিন্তু এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও উপকারী।

নিয়মিত হালকা ওজন তোলা বা স্ট্রেন্থ ট্রেনিং করলে বড় পেশিগুলো সক্রিয় হয়।

এতে হার্টের কার্যকারিতা বাড়ে এবং শরীরের অতিরিক্ত ফ্যাট কমে।

বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি অনেক কার্যকরী।

সপ্তাহে ২ দিন হালকা ডাম্বেল এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।

৭. নাচ

  • নাচকে অনেকেই বিনোদনের মাধ্যম মনে করেন, কিন্তু এটি একটি অসাধারণ ব্যায়ামও বটে।
  • নাচ করলে পুরো শরীর সচল থাকে, যা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়।
  • শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বাড়ে, ফলে হার্ট ও ফুসফুস শক্তিশালী হয়।
  • নিয়মিত নাচ ক্যালোরি বার্ন করে, শরীর ফিট রাখে এবং মানসিক আনন্দ দেয়।
  • প্রতিদিন অন্তত ১৫–২০ মিনিট যেকোনো নাচ করলে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকে।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) বলছে—প্রতি সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতার অ্যারোবিক ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিট উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম করা উচিত।শুধু ব্যায়ামই নয়, পাশাপাশি সুষম খাবার খাওয়া, ধূমপান ত্যাগ, মানসিক চাপ কমানো এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখাও হার্টকে সুস্থ রাখতে অপরিহার্য।

শেষ কথা

হার্ট সুস্থ রাখতে আলাদা করে জিমে যাওয়ার দরকার নেই। হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম, নাচ—এসব সহজ ব্যায়ামই প্রতিদিন করলে হৃদপিণ্ড শক্তিশালী হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং জীবন হয় আরও প্রাণবন্ত। সুস্থ হার্ট মানেই দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবন।