শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

হিজবুল্লাহ কি এখনো সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম?

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার চলতি মাসের শুরুর দিকে ঘোষণা দেয় যে, তারা লেবাননের ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত একটি সেল ভেঙে দিয়েছে। অভিযানে দামেস্কের গ্রামীণ অঞ্চলে বিপুল অস্ত্রশস্ত্রসহ কয়েকজনকে আটক করার দাবি করে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

তবে হিজবুল্লাহ তাৎক্ষণিকভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হিজবুল্লাহর সিরিয়ার ভেতরে কোনো উপস্থিতি বা কার্যক্রম নেই এবং আমরা দেশটির স্থিতিশীলতা ও জনগণের নিরাপত্তার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সিরিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, বিশেষায়িত ইউনিট এবং সাধারণ গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ অভিযানে ডামাস্কাসের উপকণ্ঠ সাসা ও কানাকের শহরে অভিযান চালানো হয়। সেখানে রকেট লঞ্চার, অ্যান্টি-ট্যাংক মিসাইল, ১৯টি গ্র্যাড রকেটসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ জব্দ করা হয়। এ সময় পাঁচজনকে আটক করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ সেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের ফেলো ফাদি নিকোলাস নাসার মনে করেন, হিজবুল্লাহর কার্যক্রমকে তেহরান তাদের আঞ্চলিক নিরাপত্তা কৌশলের অংশ হিসেবেই দেখছে।

তিনি বলেন, লেবাননে হিজবুল্লাহর দুর্বলতা এবং সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতনের পরও ইরান এ গোষ্ঠীর ওপর ভরসা রাখছে। মূলত অগ্রগতি ব্যাহত করা ও সুযোগমতো অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য।

যুক্তরাষ্ট্রের সেঞ্চুরি ফাউন্ডেশনের বৈরুতভিত্তিক ফেলো স্যাম হেলার বলেন, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন এবং ইসরাইলের সামরিক চাপের ফলে হিজবুল্লাহ বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে। সিরিয়ার মাধ্যমে সরবরাহ লাইন হারানো তাদের জন্য মারাত্মক।

তবে তার মতে, বর্তমানে হিজবুল্লাহ সিরিয়ায় সক্রিয়ভাবে অস্থিতিশীলতা তৈরির অবস্থায় আছে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

কূটনৈতিক বার্তা নাকি বাস্তব ঘটনা?

বেশ কয়েকজন বিশ্লেষক মনে করেন, সিরিয়ার এই ঘোষণার পেছনে ইসরাইলের প্রতি বার্তা দেওয়ার উদ্দেশ্যও থাকতে পারে। ঘটনাটি ঘটেছে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগদানের ঠিক আগমুহূর্তে।

ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন কেন্দ্রের পরিচালক জোশুয়া ল্যান্ডিসের মতে, এই গল্প অনেকটাই অনিশ্চিত। তবে সময়ের প্রেক্ষিতে এটি ইসরাইলের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা প্রদর্শনের ইঙ্গিত হতে পারে।

নতুন বাস্তবতায় হিজবুল্লাহর সীমাবদ্ধতা

২০২৪ সালে ইসরাইলের ব্যাপক অভিযানে হিজবুল্লাহর বহু শীর্ষ নেতা নিহত হন, যার মধ্যে সংগঠনের দীর্ঘদিনের প্রধান হাসান নাসরাল্লাহও ছিলেন। এতে তাদের সামরিক অবকাঠামো গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশ্লেষকদের মতে, এই আঘাত ইরানের কৌশলকেও দুর্বল করেছে এবং দ্রুত আসাদ সরকারের পতন হয়েছে।

লেবাননেও হিজবুল্লাহ এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। দেশটির সরকার ও আন্তর্জাতিক মহল অস্ত্রসমর্পণের চাপ সৃষ্টি করছে, যদিও সংগঠনটি সতর্ক করেছে যে এমন পদক্ষেপ গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

লেবাননের রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাদিম শেহাদে বলেন, হিজবুল্লাহ সিরিয়ায় যুদ্ধে যত মানুষ হারিয়েছে, ইসরাইলের সঙ্গে লড়াইতেও ততটা হারায়নি। আসাদ সরকারকেও শেষ পর্যন্ত টিকিয়ে রাখা যায়নি। ফলে পুরো অভিযানে তাদের যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখন অনেকটা অর্থহীন মনে হচ্ছে।

অতীতের তুলনায় হিজবুল্লাহর প্রভাব কমে গেলেও ইরান এখনো তাদের আঞ্চলিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। তবে সিরিয়া-ইসরাইল শান্তি আলোচনা, অভ্যন্তরীণ চাপে জর্জরিত লেবানন এবং সাম্প্রতিক বড় ধরনের ক্ষতির কারণে হিজবুল্লাহর সিরিয়ায় আগের মতো শক্তিশালী উপস্থিতি দেখানো আপাতত কঠিন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।