বুধবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৫

শিরোনাম

হৃদরোগে সময়মতো চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের বিকল্প নেই

মঙ্গলবার, অক্টোবর ৭, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ: বাংলাদেশে হৃদরোগ এখন আর কেবল চিকিৎসকদের আলোচনার বিষয় নয়, বরং প্রতিটি পরিবারের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চারপাশে তাকালেই দেখা যায় কারো বাবা, কারো মা বা আত্মীয় হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন। অনেকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। এর পেছনে যেমন রয়েছে ধূমপান, অস্বাস্থ্যকর খাবার ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, তেমনি রয়েছে সচেতনতারও ঘাটতি।

শহরাঞ্চলে ব্যস্ত জীবনযাত্রা, ফাস্টফুডের প্রচলন আর মানসিক চাপ মধ্যবয়সী মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে গ্রামে পরিস্থিতি ভিন্ন, সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা ব্যবস্থা সীমিত এবং বিশেষজ্ঞ কার্ডিওলজিস্টের অভাব রয়েছে। ফলে অনেক রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে উপসর্গকে অবহেলা করে ফেলেন। বুক ভারী লাগা বা হাত ব্যথার মতো লক্ষণগুলোকে সাধারণ অসুখ ভেবে ফেলে রাখা হয়, যা পরে প্রাণঘাতী আকার ধারণ করে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি অবশ্যই আশার আলো জ্বালিয়েছে। এখন এঞ্জিওগ্রাম, এঞ্জিওপ্লাস্টি বা বাইপাস সার্জারির মতো জটিল চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব হচ্ছে। আগে যেসব রোগীকে বিদেশে যেতে হতো, আজ অনেকেই দেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সুস্থ হয়ে উঠছেন। তবে খরচ এখনও অনেকের নাগালের বাইরে। সরকারি হাসপাতালে তুলনামূলক কম খরচ হলেও সেখানে রোগীর ভিড় এত বেশি যে, সময়মতো সেবা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে বেসরকারি হাসপাতালগুলো বড় ভূমিকা রাখছে। যেমন, শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল আধুনিক ক্যাথল্যাব ও দক্ষ টিমের মাধ্যমে প্রতিদিন অসংখ্য হার্ট অ্যাটাক রোগীকে জরুরি সেবা দিচ্ছে। তারা শুধু চিকিৎসা শেষ করেই থেমে থাকে না, বরং রোগীর জীবনধারা পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস ও দীর্ঘমেয়াদি যত্ন সম্পর্কেও পরামর্শ দেয়।

এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম হৃদরোগ চিকিৎসায় আস্থা অর্জন করেছে। এখানে আন্তর্জাতিক মানের কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিট, দক্ষ সার্জন ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অনেক জটিল সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে। রোগীরা শুধু চিকিৎসা নয়, বরং এক ধরণের নিরাপত্তা ও মানসিক শান্তি পান। অনেকেই বলেন, চিকিৎসক ও সেবাদাতাদের আন্তরিকতা তাদের সুস্থতার যাত্রাকে সহজ করেছে।

সবচেয়ে বড় কথা, হৃদরোগের চিকিৎসা যতই উন্নত হোক না কেন, প্রতিরোধই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান। ধূমপান ছাড়তে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, স্বাস্থ্যকর খাবার বেছে নিতে হবে এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অনেক সময় ছোট ছোট পরিবর্তনই জীবন বাঁচাতে পারে।

বাংলাদেশে হৃদরোগ মোকাবিলায় এখন প্রয়োজন সচেতনতা ও সমন্বিত প্রচেষ্টা। সরকার, বেসরকারি হাসপাতাল, চিকিৎসক ও জনগণ সবাই যদি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তবে হৃদরোগ আর মৃত্যু নয়, বরং নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

লেখক
ডা. জহির উদ্দিন মাহমুদ ইলিয়াছ
এমবিবিএস, এমসিপিএস (মেডিসিন)
ডিইএম (ডায়াবেটলজি অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজি), এমডি (কার্ডিওলজি)
কার্ডিওলজি এন্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি, এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম