ভালো ঘুম শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য। ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু অভ্যাস রয়েছে, যা অনেকেই অজান্তে করে থাকেন এবং এগুলো শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি ডেকে আনে।
রাতের ঘুম না হওয়া অনেকেরই নিয়মিত সমস্যা। আলো কমানো, ফোন দূরে রাখা কিংবা গরম পানীয় খাওয়া এসব অভ্যাস অনেক সময় কার্যকর হয় না। তবে কিছু প্রাকৃতিক পানীয় রয়েছে যা রাতে ভালো ঘুমে সাহায্য করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম ভাঙার পরের প্রথম এক ঘণ্টা—যাকে বলা হয় “গোল্ডেন আওয়ার”—এই সময়কার কাজগুলোই সারাদিনের শক্তি, মনোযোগ ও মানসিক অবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
তাহলে জেনে নিন—ঘুম থেকে ওঠার পর কোন কোন কাজ এড়িয়ে চলা উচিত, আর কোনগুলো করলে দিনটি হবে সতেজ ও কর্মক্ষম।
ঘুম থেকে ওঠার পর যেসব কাজ করবেন না

অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার ঘুমানো
অনেকে অ্যালার্ম বাজলে বন্ধ করে আবার ঘুমিয়ে পড়েন। এতে শরীর ও মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়। ফলে ঝিমুনি ভাব, মাথা ভার লাগা ও দিনের কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায়।
মোবাইল ফোন স্ক্রল করা
চোখ খোলার সাথে সাথেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা নিউজফিডে ডুবে যাওয়া অনেকের অভ্যাস। এতে অপ্রয়োজনীয় মানসিক চাপ তৈরি হয় এবং দিনের শুরু হয় নেতিবাচকভাবে।
হঠাৎ উঠে দাঁড়ানো

ঘুম ভাঙার পর দ্রুত উঠে দাঁড়ালে রক্তচাপ হঠাৎ নেমে যেতে পারে। এর ফলে মাথা ঘোরা, ভারসাম্য হারানো এমনকি অজ্ঞান হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
খালি পেটে কফি খাওয়া
অনেকেই ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গেই কফি পান করেন। কিন্তু এতে শরীরের কর্টিসল হরমোন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা শরীরের প্রাকৃতিক জাগ্রত চক্রকে ব্যাহত করে।
অতিরিক্ত সময় বিছানায় শোয়া

অলসভাবে বিছানায় বেশি সময় শুয়ে থাকলে শরীর ও মস্তিষ্ক উভয়ই কর্মক্ষমতা হারায়। এতে দিন শুরু হয় ক্লান্তি দিয়ে।
নেগেটিভ চিন্তা করা
সকালে দুশ্চিন্তা বা হতাশার চিন্তা শুরু করলে সারাদিন মন খারাপের প্রভাব থেকে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সকালে ফুসফুস সবচেয়ে সংবেদনশীল থাকে। এই সময় ধূমপান করলে ফুসফুসের ক্ষতি বহুগুণ বেড়ে যায়।
ভারী খাবার খাওয়া
খালি পেটে অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার খেলে হজমে সমস্যা তৈরি হয় এবং পেট ভারী লাগে।
শরীর না টানা বা স্ট্রেচিং না করা
ঘুমের পর শরীর শক্ত হয়ে থাকে। স্ট্রেচিং না করলে রক্ত সঞ্চালনে সমস্যা হতে পারে, ফলে ক্লান্তি দীর্ঘস্থায়ী হয়।
ঘুম থেকে ওঠার পর যেসব কাজ করা উচিত
এক গ্লাস পানি পান করুন
ঘুমের সময় শরীর পানিশূন্য হয়ে যায়। তাই উঠেই এক গ্লাস পানি পান করলে শরীর হাইড্রেট থাকে, হজম ভালো হয় এবং মস্তিষ্ক সতেজ হয়।
গভীর শ্বাস, ধ্যান বা প্রার্থনা
দিনের শুরুতে কয়েক মিনিট ধ্যান, দোয়া বা গভীর শ্বাস নিলে মানসিক প্রশান্তি আসে এবং সারাদিনের স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
শরীর টানুন বা হালকা স্ট্রেচিং করুন
হালকা যোগব্যায়াম বা শরীর টানলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, পেশি নমনীয় হয় এবং শরীর সক্রিয় হয়ে ওঠে।
প্রাকৃতিক আলোতে সময় কাটান
সকালের সূর্যের আলো শরীরের জৈবিক ঘড়ি ঠিক রাখে। এটি মুড ভালো করে, ভিটামিন-ডি যোগায় এবং দিন শুরুতে উদ্যমী করে তোলে।
স্বাস্থ্যকর নাশতা
দিনের প্রথম খাবার হলো শরীরের জ্বালানি। ডিম, ফল, দুধ, ওটস, শস্যদানা ইত্যাদি দিয়ে তৈরি পুষ্টিকর নাশতা শরীর ও মনের শক্তি যোগায়।
দিনের পরিকল্পনা তৈরি করুন
সকালে কয়েক মিনিট সময় নিয়ে দিনের কাজের তালিকা লিখে ফেললে সময় নষ্ট হয় না, কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে এবং মানসিক চাপ কমে।
ইতিবাচক চিন্তা দিয়ে দিন শুরু করুন
সকালে একটি ইতিবাচক চিন্তা বা অনুপ্রেরণামূলক বাক্য উচ্চারণ করলে সারাদিন মন ভালো থাকে এবং কাজের প্রতি উদ্যম বাড়ে।
ঘুম থেকে ওঠার পরের প্রথম এক ঘণ্টা আপনার সারাদিনের কর্মক্ষমতা, মানসিক অবস্থা ও স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। তাই নেতিবাচক অভ্যাস বাদ দিয়ে ইতিবাচক রুটিন তৈরি করুন। এতে শুধু কর্মক্ষমতাই বাড়বে না, বরং মন ও শরীরও থাকবে সুস্থ ও প্রাণবন্ত।
রাতে ভালো ঘুমের জন্য পান করুন জিরা দুধ

রাতের ঘুম না হওয়া অনেকেরই নিয়মিত সমস্যা। আলো কমানো, ফোন দূরে রাখা কিংবা গরম পানীয় খাওয়া এসব অভ্যাস অনেক সময় কার্যকর হয় না। তবে কিছু প্রাকৃতিক পানীয় রয়েছে যা রাতে ভালো ঘুমে সাহায্য করতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো জিরা দুধ।
উষ্ণ দুধ দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের জন্য জনপ্রিয়। এতে জিরা মেশালে উপকারিতা আরও বৃদ্ধি পায়। জিরা দুধ হজম, চাপ উপশম এবং ঘুম বৃদ্ধি করার জন্য উপকারী। ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু এলাকায় এটি দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য সচেতনদের মধ্যে জনপ্রিয়।
আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, জিরা (কিউমিনাম সাইমিনাম) হজমশক্তি বাড়ায় এবং কফ ও বাত দোষের ভারসাম্য রক্ষা করে। দুধের সঙ্গে মিশিয়ে এটি শরীরকে শীতল ও পুষ্টিকর করে, যা প্রায় সবার জন্য নিরাপদ।


