আমাদের অনেকের মনে প্রায়ই প্রশ্ন জাগে— দিনে কতবার খাওয়া উচিত? কেউ বলেন তিনবেলা নিয়মিত খাবার, কেউ আবার বলেন ঘন ঘন ছোট ছোট খাবার খাওয়া ভালো, আবার অনেকে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংয়ের পক্ষে। প্রকৃতপক্ষে কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম সবার জন্য সমানভাবে কার্যকর নয়। বরং ব্যক্তির শরীরের চাহিদা, স্বাস্থ্য অবস্থা, বয়স, লক্ষ্য এবং জীবনধারার ওপর নির্ভর করে খাবারের ধরন ও সময় ঠিক করা সবচেয়ে ভালো উপায়।
দিনে কতবার খাওয়া উচিত? বিজ্ঞান কী বলে?

খাবার খাওয়ার পর শরীর শক্তি পায়, বিপাক প্রক্রিয়া সচল হয় এবং কোষের পুনর্গঠন ঘটে। খাবার গ্রহণের পর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, ইনসুলিন নিঃসৃত হয় এবং শরীর তা ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করে। কয়েক ঘণ্টা পর যখন শর্করার মাত্রা কমতে থাকে, তখন শরীর জমা শক্তি ব্যবহার শুরু করে।
তাই দিনে কতবার খাবেন, সেটি আপনার—
- হজম ক্ষমতা,
- ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ,
- শরীরের ওজন এবং
- প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ—সবকিছুর ওপর প্রভাব ফেলে।
দিনে তিনবার খাবার
প্রচলিত সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবার শরীরের প্রাকৃতিক জৈবিক ছন্দ (সার্কাডিয়ান রিদম)-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
- এটি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- অপ্রয়োজনীয় স্ন্যাকস খাওয়া কমায়।
- ব্যস্ত মানুষদের জন্য এটি কার্যকর একটি রুটিন।
তবে তিনবেলা খাবারের মাঝে অতিরিক্ত ক্ষুধা পেলে স্বাস্থ্যকর স্ন্যাকস খাওয়া যেতে পারে।
- ছোট ছোট ঘন ঘন খাবার (৫–৬ বার)
- অনেক পুষ্টিবিদ পরামর্শ দেন ৫–৬ বার ছোট ছোট খাবার খেতে।
- এটি রক্তে শর্করার ওঠানামা কমায়।
- অতিরিক্ত ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে।
ক্রীড়াবিদ বা যারা অনেক বেশি শক্তি খরচ করেন, তাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
তবে সতর্ক থাকতে হবে— যদি ছোট ছোট খাবারগুলো হয় উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, প্রসেসড বা অপুষ্টিকর, তবে হজমে সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি বা অতিরিক্ত ক্যালোরি গ্রহণের ঝুঁকি থাকে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (যেমন ১৬:৮ বা ৫:২)

এটি বর্তমানে বেশ জনপ্রিয় একটি পদ্ধতি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাওয়া হয়, আর বাকিটা সময় উপোস থাকা হয়।
- ওজন কমাতে কার্যকর।
- ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়।
- শরীরের প্রদাহ কমায়।
তবে অনেকের জন্য এটি কার্যকর হলেও, কিছু মানুষের ক্ষেত্রে এটি ক্লান্তি, বিরক্তি বা অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে। তাই সবার আগে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
নিজের জন্য কোনটি সঠিক বুঝবেন যেভাবে

ক্ষুধার সংকেত শুনুন – একঘেয়েমি বা অভ্যাস নয়, সত্যিকারের ক্ষুধা পেলে খাবেন। পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন – প্রতিটি খাবারে রাখুন শাকসবজি, প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও গোটা শস্য। জীবনধারার সাথে মিলিয়ে নিন – ব্যস্ত জীবনে হয়তো ৩ বেলা যথেষ্ট, আবার কারো জন্য ৫–৬ বার খাওয়া দরকার হতে পারে। স্বাস্থ্যের অবস্থা বিবেচনা করুন – ডায়াবেটিস, অ্যাসিডিটি, থাইরয়েড বা হজম সমস্যা থাকলে খাবারের সময় ও পরিমাণ নিয়ে বাড়তি সতর্কতা দরকার।
উপসংহার
দিনে কতবার খাবেন— এটি নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনি কী খাচ্ছেন, কতটা খাচ্ছেন এবং শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে। সবার শরীর ভিন্ন, তাই সবার খাবারের রুটিনও আলাদা হতে পারে। তাই নিজের শরীরের সংকেত শুনুন, পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন এবং একটি ভারসাম্যপূর্ণ খাবার পরিকল্পনা তৈরি করুন—যা আপনার শক্তি, হজম ও সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাবে।


