ত্বকে যত্ন নেওয়া শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং ত্বকে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ও সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্যও জরুরি। চারদিকে দূষণ, ধুলাবালি, আবহাওয়ার পরিবর্তন এবং অনিয়মিত জীবনধারার কারণে ত্বক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক পণ্য ব্যবহার, পর্যাপ্ত পানি পান করে শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ এবং রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
তাই সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সমস্যা হলো— অনেকে অজান্তেই এমন কিছু ভুল করেন, যা ত্বকের উপকারের পরিবর্তে উল্টো ক্ষতি ডেকে আনে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের যত্নে সাধারণ কিছু ভুল এবং এগুলো থেকে হতে পারে এমন ক্ষতির কথা—
ত্বকের যত্নে অতিরিক্ত মুখ ধোয়া

অনেকেই মনে করেন, বারবার মুখ ধুলে ত্বক পরিষ্কার থাকে। কিন্তু বাস্তবে এটি ত্বকের প্রাকৃতিক তেলকে নষ্ট করে দেয়।
- বারবার মুখ ধুলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়।
- ত্বকে চুলকানি ও জ্বালা তৈরি হয়।
- অনেক সময় শরীর এর প্রতিক্রিয়ায় বাড়তি তেল উৎপাদন শুরু করে, ফলে ব্রণ দেখা দেয়।
- তাই দিনে ২–৩ বার মৃদু ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধোয়া যথেষ্ট।
২. সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে বের হওয়া
- সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে রক্ষা করে।
- সানস্ক্রিন ছাড়া রোদে বের হলে দ্রুত বলিরেখা পড়ে।
- ত্বক কালচে হয়ে যায়।
- দীর্ঘমেয়াদে ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।
- বাইরে বের হওয়ার আগে অন্তত SPF ৩০ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
৩. অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার

- ত্বকের যত্নে প্রসাধনী ব্যবহার স্বাভাবিক বিষয়, কিন্তু সঠিক নিয়ম না মানলে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
- একসঙ্গে রেটিনল, এএইচএ বা ভিটামিন সি যুক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করলে ত্বকের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
- ত্বকে জ্বালা, লালচেভাব এবং অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
- প্রসাধনী ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করুন এবং একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
৪. ব্রণ ফাটানো
- ব্রণ বিরক্তিকর হলেও জোর করে ফাটানো একেবারেই উচিত নয়।
- এতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
- মুখে স্থায়ী দাগ তৈরি হয়।
- আশেপাশে নতুন ব্রণ দেখা দেয়।
- ব্রণের সঠিক চিকিৎসার জন্য ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
৫. মেকআপ না তুলে ঘুমানো

- অনেকেই ক্লান্ত হয়ে মেকআপ তুলতে ভুলে যান, যা ত্বকের বড় ক্ষতির কারণ।
- মেকআপের অবশিষ্টাংশ রোমকূপ বন্ধ করে দেয়।
- ব্রণ ও ব্ল্যাকহেড তৈরি হয়।
- দীর্ঘমেয়াদে ত্বক নিস্তেজ হয়ে যায়।
- ঘুমানোর আগে অবশ্যই মেকআপ রিমুভার বা মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার করুন।
৬. বেশি গরম পানি দিয়ে মুখ ধোয়া
- হালকা গরম পানি ত্বকের জন্য ভালো হলেও অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করলে—
- ত্বকের আর্দ্রতা কমে যায়।
- ত্বকের বাইরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
- শুষ্কতা ও খোসা ওঠার সমস্যা দেখা দেয়।
- কুসুম গরম বা স্বাভাবিক পানি ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো।
৭. হাত ও ঘাড়ের যত্ন না নেওয়া
- আমরা সাধারণত শুধু মুখের যত্নে মনোযোগ দিই। কিন্তু—
- ঘাড় ও হাতেও রোদ, ধুলো, ও দূষণের প্রভাব পড়ে।
- বয়সের ছাপ প্রথমে হাত ও ঘাড়ে ফুটে ওঠে।
- তাই মুখের মতোই নিয়মিতভাবে হাত ও ঘাড়ে ময়েশ্চারাইজার ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
শেষ কথাত্বকের যত্ন মানে শুধু ফেসপ্যাক, প্রসাধনী বা দামি প্রোডাক্ট ব্যবহার নয়। সঠিক অভ্যাস, নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা, পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার এবং পর্যাপ্ত ঘুম—এসবই ত্বককে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে।
মনে রাখবেন, অতিরিক্ত যত্ন অনেক সময় ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই ত্বকের যত্নে ভারসাম্য বজায় রাখুন এবং নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক রুটিন অনুসরণ করুন।


