বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

মানসিক চাপ থেকে কি ত্বকে ব্রণ হতে পারে? যা বলছে গবেষণা

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
ত্বকে

ব্রণ হল ত্বকের সবচেয়ে সাধারণ অবস্থার মধ্যে একটি যা সমস্ত বয়সকে প্রভাবিত করে, যদিও এটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়।

ব্রণ একটি অস্বস্তিকর এবং প্রায়ই দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা, যা শুধু সৌন্দর্য নয়, আত্মবিশ্বাসেও প্রভাব ফেলে। সাধারণত মুখ বা শরীরের যেসব জায়গায় তেল গ্রন্থি বেশি থাকে, সেখানে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। এর মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় ত্বকের রন্ধ্রে অতিরিক্ত তেল বা সেবাম জমা হওয়া, মৃত কোষের স্তর তৈরি হওয়া এবং ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি।

তবে আধুনিক গবেষণা বলছে, ব্রণের কারণ শুধুমাত্র হরমোন বা ত্বকের যত্নের অভাব নয়। মানসিক চাপ বা স্ট্রেসও এই সমস্যার একটি বড় ট্রিগার হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, বয়ঃসন্ধিকাল পেরিয়েও অনেকের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা থেকে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, এর পেছনে মানসিক চাপের প্রভাব অনেকাংশে দায়ী।

মানসিক চাপ থেকে কি ত্বকে ব্রণ হতে পারে?

মানসিক চাপ ও ব্রণের সম্পর্ক

মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে কর্টিসল নামক হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। কর্টিসলকে সাধারণভাবে ‘স্ট্রেস হরমোন’ বলা হয়। কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় নানা পরিবর্তন আসে। এটি রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন এবং মেটাবলিজমকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ত্বকের তেল গ্রন্থির কার্যক্রমও বাড়িয়ে তোলে।

ফলে অতিরিক্ত সেবাম বা তেল জমে ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থায় মৃত কোষ ও ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রণে রন্ধ্র ফুলে ওঠে এবং ব্রণ তৈরি হয়। তাই দেখা যায়, মানসিক চাপ বেশি থাকলে ব্রণ বেড়ে যায় এবং পুরোনো ব্রণ সারতেও দেরি হয়।

গবেষণার ফলাফল

একাধিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে মানসিক চাপ এবং ব্রণের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ—

সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মানসিক চাপ বাড়লে তাদের ব্রণও বেড়ে যায়।

ক্লিনিক্যাল ডার্মাটোলজি জার্নালের তথ্য অনুযায়ী, কর্টিসল ক্ষরণের ফলে শুধু ব্রণ নয়, ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসও বেড়ে যেতে পারে।

আরও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ত্বকের প্রতিরোধক্ষমতা দুর্বল করে, ফলে ব্রণ সহজে নিয়ন্ত্রণে আসে না।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, মানসিক চাপ সরাসরি ব্রণ তৈরি না করলেও এটি ব্রণকে বাড়িয়ে তোলে বা স্থায়ী করে দেয়। কারণ মানসিক চাপ—

  • হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে
  • ত্বকের তেল গ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয় করে
  • ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করে দেয়
  • ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, যা ব্রণকে আরও প্রকট করে
  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার উপায়

ব্রণ নিয়ন্ত্রণে ও ত্বক সুস্থ রাখতে চাইলে মানসিক চাপ কমানো অত্যন্ত জরুরি। এজন্য কিছু কার্যকর উপায় হলো—

নিয়মিত শরীরচর্চা করুন

প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম শরীরে এন্ডরফিন বাড়ায়, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।

মেডিটেশন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম

নিয়মিত ধ্যান, মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন কর্টিসল হরমোনের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণে রাখে।

সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কাজে যুক্ত থাকুন

গান শোনা, বই পড়া, ছবি আঁকা কিংবা পছন্দের কোনো কাজ মানসিক চাপ কমাতে ভূমিকা রাখে।

সুষম খাদ্য গ্রহণ

পর্যাপ্ত ভিটামিন, মিনারেল ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাদ্য হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। অতিরিক্ত চিনি ও তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

পর্যাপ্ত ঘুম

প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম মানসিক চাপ কমায় এবং ত্বকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

শেষ কথা

ব্রণ একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনের কারণগুলো জটিল। শুধু হরমোন বা ত্বকের যত্নের অভাব নয়, মানসিক চাপও ব্রণ বৃদ্ধির একটি বড় কারণ হতে পারে। গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে, মানসিক চাপ বাড়লে শরীরে কর্টিসল ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা ত্বকের তেল গ্রন্থির কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে।

তবে সুখবর হলো, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ব্রণ অনেকাংশে কমানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা, পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাদ্য এবং ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখা। সব মিলিয়ে বলা যায়, সুস্থ ত্বক পেতে হলে কেবল প্রসাধনী নয়, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেও মনোযোগী হতে হবে।