হৃদরোগ বলতে হার্ট বা হৃৎপিণ্ডকে প্রভাবিত করে এমন বিভিন্ন ধরনের রোগকে বোঝায়, যার মধ্যে রয়েছে করোনারি ধমনীর রোগ, হৃদস্পন্দনের সমস্যা (অ্যারিথমিয়া), হার্ট ফেইলিওর, এবং জন্মগত হৃদরোগ। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর একটি অন্যতম প্রধান কারণ এই হৃদরোগ।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিশুদের জীবন মোবাইল, অনলাইন ক্লাস, গেমিং ও স্ট্রিমিং–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। তবে নতুন এক গবেষণা জানাচ্ছে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শুধু মনোযোগ বা মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে না—শিশুদের হৃদরোগের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।
বেশি স্ক্রিন টাইম শিশুদের হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ায়

গবেষণার তথ্য
Journal of the American Heart Association-এ প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, শিশু ও কিশোরদের প্রতিটি অতিরিক্ত ঘণ্টা অবসর স্ক্রিন ব্যবহার (সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং, সিরিজ দেখা ইত্যাদি) তাদের কার্ডিওমেটাবলিক ঝুঁকি বাড়ায়।
ড্যানিশ দুই দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা (COPSAC2010 ও COPSAC2000) থেকে এক হাজারেরও বেশি মা–শিশু ও কিশোরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এখানে স্ক্রিন টাইম প্যারেন্ট বা শিশু নিজেরাই রিপোর্ট করেছে। পাশাপাশি ঘুম ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ দুই সপ্তাহ ধরে অ্যাক্সেলেরোমিটার দিয়ে মাপা হয়েছে।
ঝুঁকি মূল্যায়নের জন্য কোমরের মাপ, সিস্টোলিক রক্তচাপ, এইচডিএল কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড ও ব্লাড গ্লুকোজ পরীক্ষা করা হয়।
কী পাওয়া গেছে
- শিশুদের প্রতিটি অতিরিক্ত ঘণ্টা স্ক্রিন টাইম কার্ডিওমেটাবলিক ঝুঁকি প্রায় ০.০৮ স্ট্যান্ডার্ড ডিভিয়েশন বাড়ায়।
- কিশোরদের ক্ষেত্রে এটি প্রায় ০.১৩।
- ঘুমের অভাব বা দেরিতে ঘুমানো ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।
- স্ক্রিন টাইম–কার্ডিওমেটাবলিক ঝুঁকির প্রায় ১২% প্রভাব ঘুমের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
- গবেষকরা ৩৭টি ব্লাড–বেসড বায়োমার্কার দিয়ে একটি “স্ক্রিন টাইম ফিঙ্গারপ্রিন্ট”ও শনাক্ত করেছেন।
শিশুদের জন্য প্রাসঙ্গিকতা

ভারতে ২০২০ সালের পর অনলাইন ক্লাস ও স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে শিশুদের স্ক্রিন টাইম ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এর প্রভাব হিসেবে ঘুম কমেছে এবং কার্ডিওমেটাবলিক সমস্যা যেমন স্থূলতা, ইনসুলিন প্রতিরোধ ও উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন—শিশুদের স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত ঘুম ও শারীরিক ক্রিয়াকলাপ অপরিহার্য।
পরিবারিক পরামর্শ ও করণীয়
- শিক্ষাগত স্ক্রিন ছাড়া দৈনিক স্ক্রিন টাইম ২ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখুন।
- খাবারের সময় ও ঘুমের আগে “স্ক্রিন-ফ্রি” সময় নির্ধারণ করুন।
- ঘুমানোর অন্তত এক ঘণ্টা আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন।
- বাইরে বা ঘরে সক্রিয় খেলাধুলায় উৎসাহিত করুন।
- বাবা-মা নিজেরাও স্ক্রিন ব্যবহারে উদাহরণ তৈরি করুন।
- শিল্পকর্ম, হস্তশিল্প, বই পড়া বা গল্প লেখার মতো বিকল্প শখ উৎসাহিত করুন।
- প্রয়োজন হলে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল ব্যবহার করে ডিভাইসের স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন।
- প্রতিদিন নিয়মিত ঘুম নিশ্চিত করুন।
শিশুদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করুন, কেবল নিয়ম নয়—কারণও বোঝান।
শেষ কথা

এই গবেষণা শিশুদের হৃদরোগ ঝুঁকির বিষয়ে নতুন করে সতর্ক করেছে। তবে স্ক্রিন টাইম কমানো, নিয়মিত ঘুম ও সক্রিয় জীবনধারা বজায় রাখা হলে শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি কার্ডিওভাসকুলার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।