শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

বিংহ্যামটনে সাশ্রয়ী বাড়ি, বাড়ছে বাঙালিদের বসবাস

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

নিউইয়র্ক শহরের তুলনায় কম খরচে বাড়ি কেনা এবং ভাড়া পাওয়া যাওয়ায় বিংহ্যামটনে ক্রমেই বাড়ছে বাঙালিদের সংখ্যা। সময়ের সাথে সাথে শহরটি বাঙালিদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি অনেক বাংলাদেশি পরিবার এই শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছেন। শহরের সাশ্রয়ী আবাসন, নিরাপদ পরিবেশ এবং বিদ্যালয় ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার কারণে এই প্রবণতা আরও জোরদার হচ্ছে।

জানা গেছে, বিংহ্যামটনে বাড়ি কেনার খরচ শহরের এলাকা ও ফ্ল্যাটের ধরন অনুযায়ী প্রায় ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ৯০ হাজার ডলারের মধ্যে। অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার ডলারের মূল্যের বাড়ি সহজেই পাওয়া যায়। ভাড়ার খরচও তুলনামূলকভাবে কম; এক-কক্ষের অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া মাসে প্রায় ৭০০ থেকে ৯শ ডলার, দুই-কক্ষের ভাড়া ১ হাজার থেকে ১৫শ  ডলার। শহরে খাবার ও দৈনন্দিন খরচও অনেক সাশ্রয়ী।

সম্প্রতি বিংহ্যামটনে একাধিক সাশ্রয়ী আবাসন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। উত্তর বিংহ্যামটনের টাউন অ্যান্ড কান্ট্রি অ্যাপার্টমেন্টস কমপ্লেক্সে ২৫৬টি ফ্ল্যাট পুনর্নির্মাণের জন্য ৯৪ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এতে ভাড়া সহায়তার জন্য ফেডারেল সেকশন–৮ সুবিধা যুক্ত থাকবে। পৌরসভা নতুন জায়গা ব্যবহার বিধি চালু করেছে। যার ফলে, পার্কিংয়ের বাধ্যবাধকতা কমানো হচ্ছে এবং আরও বেশি পরিবারকে সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থানের সুযোগ দেওয়া যাচ্ছে।

নিম্ন ও মধ্যম আয়ের পরিবারদের জন্য টার্গেটেড হোম ইমপ্রুভমেন্ট প্রোগ্রাম-এর আওতায় বাড়ি সংস্কারের সুযোগও চালু আছে। এছাড়া নতুন সমর্থনমূলক আবাসন প্রকল্প শুরু হয়েছে, যেখানে পুনর্বাসন ও সামাজিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। শহরে ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখতে কার্যকর করা হয়েছে গুড কজ ইভিকশন আইন। যার ফলে ভাড়া বছরে সর্বোচ্চ আট শতাংশের বেশি বাড়ানো যাবে না এবং অযৌক্তিকভাবে ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ করা কঠিন হবে।

রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিংহ্যামটনে বাসা ভাড়া ও বাড়ির মূল্য নিউইয়র্ক শহরের তুলনায় অনেক কম। অনেক বাঙালি পরিবার নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসনের সুযোগে শহরটিকে স্থায়ীভাবে বসবাসের জায়গা হিসেবে বেছে নিচ্ছেন।

বিংহ্যামটনে বসবাসরত বাঙালি অভিবাসী মো. সাইফুল বলন, এখানে এখন নতুন নতুন লোক আসতেছে। এই শহরের ভবিষ্যৎ ভালো। তিনি বলেন,  ১ থেকে দেড় দুই লাখ ডলারের মধ্যে সিঙ্গেল এবং তিন লাখের মধ্যে টু ফ্যামিলির জন্য বড় বাড়ি পাওয়া যাচ্ছে বিংহ্যামটনে। যারফলে নিউইয়র্ক, নিউজার্সি কিংবা মিশিগান থেকেও অনেক পরিবার এখানে আসছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগে এক বা দুইটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ছিল। এখন ১০ থেকে ১৫টি প্রতিষ্ঠান আছে। রেস্টুরেন্ট, পার্লার, গ্রোসারি শপ সহ সব ধরনের ব্যবসা রয়েছে বাঙালিদের। এখানে স্কুল ও মসজিদও আছে; মাদ্রাসা চালুরও ব্যবস্থা চলতেছে। বর্তমানে চাকরির বাজারও ভালো। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে কমবেশি বাঙালি রয়েছেন। এছাড়ক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বাংলাদেশি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা রয়েছেন।

শহরের সামাজিক সংগঠনগুলোর মতে, স্বল্প খরচ, প্রশস্ত জায়গা, বিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় সুবিধা এবং নিরাপদ পরিবেশের কারণে আগামী বছরগুলোতে বিংহ্যামটনে বাঙালিদের বসতি আরও বৃদ্ধি পাবে। শহরের এই প্রবণতা দেখাচ্ছে, সাশ্রয়ী আবাসন এবং জীবনযাত্রার খরচ কম থাকার কারণে বিংহ্যামটন বাঙালিদের জন্য ক্রমেই একটি স্বস্তিদায়ক ও স্থায়ী ঠিকানা হয়ে উঠছে।

প্রসঙ্গত, নিউইয়র্কের আপস্টেট অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর বিংহ্যামটন। শহরটি প্রায় ৪৭ হাজার বাসিন্দা নিয়ে গড়ে উঠেছে। তবে ব্রুম কাউন্টি সমেত মোট জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ। বিংহ্যামটন নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরটি শিল্প ও শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে বিংহ্যামটন বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শহরে উচ্চশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধার কারণে অনেক পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।