শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

প্রবাসেও কদর বাংলাদেশি সংবাদপত্র, সময়ের সঙ্গী প্রবাসী বাঙালিদের

মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

প্রিন্ট করুন

বাঙালি মানেই শেকড়ের প্রতি টান। সেই টানই ‘৫২-এর ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করতে শিখিয়েছে। বিদেশে পাড়ি জমালেও সেই মায়া ও ভালোবাসা প্রবাসী বাঙালিদের হৃদয়ে অটুট থাকে। তাইতো যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেও তারা ভুলতে পারেন না বাংলা ভাষার ছোঁয়া। উজ্জ্বল নামিদামি ইংরেজি সংবাদপত্র হাতের কাছে থাকলেও বাঙালিরা এখনও মাতৃভাষার সংবাদপত্রে বেশি টান অনুভব করেন।

নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে প্রতি সাপ্তাহে নিয়ম করে বাঙালিরা বাসায় নিয়ে যান নানা বাংলা সংবাদপত্র। এসব পত্রিকায় তারা খুঁজে পান শেকড়ের পরিচয়, দেশের খবর, আবার বিশ্বজুড়ে নানা ঘটনার বিশ্লেষণও। বিদেশের মাটিতে এসব সংবাদপত্র যেমন প্রবাসী বয়স্কদের সময় কাটানোর সঙ্গী, তেমনি শিশু-কিশোরদের কাছে মাতৃভাষা শেখার অন্যতম মাধ্যম।

শুধু তাই নয়, বাঙালি কমিউনিটির অধিকার, রাজনীতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, এমনকি ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এসব সংবাদপত্র। যার ফলে সময়ের সাথে সাথে নিউইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাড়ছে বাংলা সংবাদপত্রের কদর।

গত শুক্রবার নিউইয়র্কের একটি মসজিদের সামনে দেখা যায় বাংলা সংবাদপত্র সংগ্রহের দৃশ্য। জুমার নামাজ শেষে প্রবাসীরা হাতে তুলে নিচ্ছেন পছন্দের পত্রিকা। কেউ নিচ্ছেন দুই কপি, কেউবা চার কপি পর্যন্ত। শুধু মসজিদ নয়, প্রবাসী দোকানপাট ও নির্দিষ্ট কিছু স্পটে নিয়ম করে এসব পত্রিকা সংগ্রহ করেন পাঠকেরা। আবার অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনলাইনে চোখ বুলিয়ে নেন।

বিশিষ্টজনরা বলছেন, বাংলা সংবাদপত্র কেবল খবরের উৎস নয়; তারা আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সেতু। বিদেশে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে এটি শেকড়ের স্মারক। নিউইয়র্ক থেকে ফ্লোরিডা কিংবা টেক্সাস, প্রতিটি কমিউনিটি সংবাদপত্রে খোঁজে নিজের দেশের প্রতিফলন। রাজনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষা, ব্যবসা সবকিছুই জায়গা পায় এসব পত্রিকায়।

তারা আরও বলেন, বাচ্চাদের মাতৃভাষা শেখাতে বাংলা সংবাদপত্র এক অমূল্য মাধ্যম। আর বয়স্কদের কাছে এটি যেন এক টাইম মেশিন দেশ ও শেকড়ের স্মৃতিকে জাগিয়ে রাখে।

মাহমুদুল হাসান নামে বাফেলোর এক বাঙালি বলেন, সারাদিনের কাজ শেষে বাসায় ফিরে যখন বাংলা পত্রিকা হাতে নেই, মনে হয় যেন দেশের মাটির গন্ধ পাচ্ছি। ইংরেজি সংবাদপত্রে নিজের সংস্কৃতি খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তু বাংলা পত্রিকায় দেশ, রাজনীতি, সংস্কৃতি সব একসাথে পাই।

শারমিন আক্তার নামে নিউইয়র্কের জ্যকসন হাইটসের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার ছোট ভাই-বোনেরা বাংলা ভালো করে পড়তে শিখছে সংবাদপত্রের মাধ্যমে। তারা গল্প, কবিতা আর বিজ্ঞাপন পড়ে আনন্দ পায়। এতে যেমন ভাষার চর্চা হচ্ছে, তেমনি দেশকেও কাছ থেকে চিনতে পারছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলা সংবাদপত্রের ইতিহাস শুরু হয় ৮০’র দশক থেকে। বর্তমানে নিউইয়র্ক থেকে নিয়মিত প্রকাশিত হয় প্রথম আলো উত্তর আমেরিকা, সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাঙ্গালী, সাপ্তাহিক আজকাল, সাপ্তাহিক প্রবাস ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশসহ বেশ কিছু পত্রিকা। সেই সাথে রয়েছে কিছু অনলাইন টেলিভিশন। এসব গণমাধ্যম প্রবাসী বাঙালিদের জন্য মাতৃভাষায় খবর, সংস্কৃতি, রাজনীতি, শিক্ষা ও সামাজিক বিষয়াবলী নিয়ে কাজ করে এবং প্রবাসী কমিউনিটির সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে থাকে।