প্রতি বছর ১৬ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হয় মালয়েশিয়া দিবস। দিবসটি কেবল একটি তারিখ নয়—এটি ঐক্য, স্থিতিস্থাপকতা ও জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক। ১৯৬৩ সালে সাবাহ ও সারাওয়াকের যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে ফেডারেশন অব মালয়েশিয়া গঠনের স্মারক এই দিনটি বহুসংস্কৃতির জাতির ভিত্তি স্থাপন করেছিল।
ইউনিভার্সিটি পলিটেক মালয়েশিয়ার ভাইস-চ্যান্সেলর সহযোগী অধ্যাপক ড. শরিফাহ সাইহিরাহ বলেন, ‘মালয়েশিয়া দিবস আমাদের সহাবস্থানের একটি মডেল, যা আগামী প্রজন্মকে শেখাতে হবে।’
এই বছর জাতীয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠিত হচ্ছে পেনাংয়ে, যা বহুসংস্কৃতির ঐতিহ্যের প্রতীকী প্রতিফলন।
ভূতত্ত্ববিদ ড. আজমি হাসান জানান, অনুষ্ঠানটি ঘুরে ঘুরে আয়োজন করা প্রতিটি রাজ্যের নাগরিককে এর সঙ্গে অর্থবহভাবে যুক্ত করে।
সাধারণ মানুষও জানিয়েছেন তাদের প্রত্যাশা। ২৯ বছর বয়সি সিটি নরটিকা বলেন, ‘আমার আশা, আমাদের জমি কখনও বহিরাগতদের কাছে বিক্রি হবে না এবং সম্প্রীতিই হবে প্রধান ভিত্তি।’ শিক্ষক ভি. রেনুগাহ মনে করেন, ‘এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক—আমাদের শান্তি ও সমৃদ্ধি দীর্ঘস্থায়ী হোক।’ তরুণ চিয়া জিন আর্ন যোগ করেন, ‘আমরা ভিন্ন পটভূমি থেকে এলেও আমাদের আসল শক্তি হলো, আমরা সবাই মালয়েশিয়ান।’
তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মালয়েশিয়া চুক্তি ১৯৬৩ (এমএ৬৩)-এর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে মালয়েশিয়া দিবসের তাৎপর্য অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ইউনিভার্সিটি মালয়ার বিশ্লেষক ড. আওয়াং আজমান বলেন, ‘এই দিন ঐক্যের স্মারক হলেও একই সঙ্গে এটি অসম্পূর্ণ কাজেরও স্মরণ করিয়ে দেয়।’
অন্যদিকে, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়ার অধ্যাপক ড. নভেল লিন্ডন উন্নয়ন, ডিজিটাল সংযোগ ও পাঠ্যক্রম সংস্কারের মাধ্যমে পূর্ব মালয়েশিয়ার আদিবাসীদের কণ্ঠস্বর আরও জোরদারের আহ্বান জানান।
এবারের থিম ‘মালয়েশিয়া মাদানি: রাকয়াত দিসানতুনি’, আর উদযাপন হবে PICCA@Arena বাটারওয়ার্থ কনভেনশন সেন্টারে। সকাল ৯টা থেকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীতে ভরপুর থাকবে দিনটি।
উপমন্ত্রী দাতুক সেরি আর রামানান আহ্বান জানিয়েছেন দেশপ্রেমিক চেতনায় মালয়েশিয়া দিবস উদযাপনের। তিনি বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যই শক্তি। চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ঐক্য অটল থাকবে, যতদিন জালুর জেমিলাং আকাশে উড়বে।’
তিনি বলেন, মালয়েশিয়া দিবস আজ আর কেবল ইতিহাসের প্রতীক নয়—এটি সমতা, অন্তর্ভুক্তি এবং সবার ভাগ করা ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি।
জাতীয় ঐক্যের বার্তা এবং বহুসংস্কৃতির উদযাপন মালয়েশিয়া দিবসকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুললেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন এমএ৬৩ বাস্তবায়নই এ উদযাপনকে পূর্ণতা দেবে। সাবাহ ও সারাওয়াকের স্বীকৃত অধিকার, উন্নয়ন তহবিল ও সমান অংশীদারিত্ব নিশ্চিত না হলে ঐক্যের বার্তা কেবল প্রতীকী রয়ে যাবে।
ইউনিভার্সিটি মালয়ার বিশ্লেষক ড. আওয়াং আজমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য স্লোগানে সীমাবদ্ধ নয়; এটি ন্যায্য সম্পদ বণ্টন, অধিকারের স্বীকৃতি এবং প্রকৃত পরামর্শের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হতে হবে। এই অনুভূতিগুলো উপেক্ষা করা আঞ্চলিকতাকে আরও বাড়িয়ে তোলার ঝুঁকি তৈরি করবে।’ তাই মালয়েশিয়া দিবস উদযাপনের পাশাপাশি এমএ৬৩ প্রতিশ্রুতিগুলোর পূর্ণ বাস্তবায়নই ভবিষ্যতের স্থায়ী জাতীয় ঐক্যের প্রকৃত ভিত্তি হতে হবে।