সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

শিরোনাম

ফ্যাটি লিভারে উপকারে আসবে যেসব ভিটামিন

শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৫

প্রিন্ট করুন
ফ্যাটি লিভার

বিশ্বজুড়ে দ্রুত বাড়ছে লিভারের রোগ, বিশেষ করে ফ্যাটি লিভার। অ্যালকোহল না খেলেও অসংখ্য মানুষ এই সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ ফ্যাটি লিভারে ভুগছেন। শুধু আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই হার আরও বেশি— ৪০ শতাংশেরও ওপরে।

চিকিৎসকরা মনে করেন, ফ্যাটি লিভারের অন্যতম কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, অনিয়মিত জীবনযাপন, স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না রাখা—সবই ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি বাড়ায়। এ কারণে এই অসুখ এখন আর কেবল নির্দিষ্ট অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং হয়ে উঠছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উদ্বেগ।

ফ্যাটি লিভারে ঝুঁকি কোথায়?

এই রোগের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, প্রাথমিক অবস্থায় কোনো স্পষ্ট উপসর্গ দেখা দেয় না। অনেকেই টের পান না যে তাদের লিভারে চর্বি জমছে। কিন্তু একবার যখন উপসর্গ প্রকাশ পেতে শুরু করে, তখন লিভার ইতিমধ্যেই অনেকটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। চিকিৎসা না হলে এটি ধীরে ধীরে লিভারে প্রদাহ, ফাইব্রোসিস, সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।

চিকিৎসকেরা সাধারণত ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা এবং রক্তে সুগার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন। তবে এখন পর্যন্ত ফ্যাটি লিভারের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক গবেষণা আশার আলো দেখাচ্ছে— কিছু ভিটামিন ফ্যাটি লিভারের ক্ষতি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

ভিটামিন বি কমপ্লেক্সের ভূমিকা

গবেষকদের মতে, ফ্যাটি লিভারের উন্নত চিকিৎসায় সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক আবিষ্কার হলো ভিটামিন বি কমপ্লেক্স। এই ভিটামিন লিভারে চর্বি জমা প্রতিরোধ করতে এবং লিভারের কোষ রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

দক্ষিণ কোরিয়ার একদল গবেষক দেখিয়েছেন, শরীরে মাইক্রোআরএনএ-৯৩ (miR-93) নামক উপাদানের মাত্রা বেড়ে গেলে ফ্যাটি লিভার দ্রুত খারাপের দিকে যায়। তারা প্রায় ১৫০টি FDA-অনুমোদিত ওষুধ ও যৌগ পরীক্ষা করে দেখেন, এর মধ্যে ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন) miR-93-এর ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে সবচেয়ে কার্যকর। এটি শুধু লিভারে চর্বি জমা রোধই করে না, বরং ইতিমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত লিভারকেও কিছুটা পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।

ভিটামিন বি১২ ও ফলিক এসিড

শুধু বি৩ নয়, গবেষণায় আরও দেখা গেছে ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক এসিড (ভিটামিন বি৯) লিভারের ক্ষতি ধীর করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে নন-অ্যালকোহলিক স্টিটোহেপাটাইটিস (NASH) রোগীদের ক্ষেত্রে এই ভিটামিনগুলো উপকারী।

এগুলো লিভারের প্রদাহ কমাতে এবং লিভার কোষের ডিএনএ সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি১২ ও ফলিক এসিড থাকলে ফ্যাটি লিভারের অগ্রগতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

ভিটামিন ই – অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুরক্ষা

ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই-এর ভূমিকা নিয়েও বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা লিভার কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে। এটি প্রদাহ কমায় এবং লিভারের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট সব রোগীর জন্য নয়— বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া এটি গ্রহণ করা উচিত নয়।

খাবারে যেসব ভিটামিন পাওয়া যায়

  • ভিটামিন বি৩ (নিয়াসিন): মাছ, মুরগির মাংস, বাদাম, ডিম
  • ভিটামিন বি১২: লাল মাংস, ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার
  • ফলিক এসিড (বি৯): পালং শাক, মসুর ডাল, ব্রকলি
  • ভিটামিন ই: কাজুবাদাম, সূর্যমুখীর তেল, পালং শাক

শেষ কথা

ফ্যাটি লিভার এখন বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যায় পরিণত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটি নিরীহ মনে হলেও, চিকিৎসা না হলে প্রাণঘাতী অবস্থায় পৌঁছাতে পারে। যদিও এ রোগের নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ এখনো নেই, তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে কিছু ভিটামিন বিশেষ করে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, বি১২, ফলিক এসিড ও ভিটামিন ই লিভারের ক্ষতি কমাতে এবং সুস্থতা ফিরিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে।

তবে মনে রাখতে হবে, ভিটামিন কোনো ম্যাজিক নয়। এগুলো কার্যকর হতে হলে সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও সুস্থ জীবনযাপন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন। সঠিক সময়ে সচেতন হলে ফ্যাটি লিভার থেকে বাঁচা সম্ভব, আর সুস্থ লিভার মানেই সুস্থ জীবন।