ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ, যেখানে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য অনেকেই ডায়েটে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। কেউ কেউ ওজন কমানোর জন্য দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার অভ্যাস করেন। তবে প্রশ্ন হলো – ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে লম্বা সময় না খেয়ে থাকা কি নিরাপদ?
দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে যা হয়

ডায়াবেটিস রোগী দীর্ঘ সময় না খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করতে পারে। এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়া) বা হাইপারগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যাওয়া) হতে পারে।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে শরীরে ইনসুলিন ও ওষুধের প্রভাবের কারণে গুরুতর শর্করা-সংকট তৈরি হতে পারে, যা প্রাণহানির ঝুঁকিও বাড়ায়।
তবে ২০১৯ সালে জার্নাল অব ক্লিনিকাল এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম-এর একটি গবেষণা বলছে, লম্বা সময় না খেয়ে থাকলে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়েও যেতে পারে। বিষয়টা একটু জটিল মনে হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা আছে—
যখন দীর্ঘ সময় খাওয়া হয় না, শরীর তখন স্ট্রেস হরমোন (যেমন কর্টিসল ও গ্লুকাগন) নিঃসরণ করে। এগুলো লিভারকে সংকেত দেয় জমে থাকা গ্লুকোজ (গ্লাইকোজেন) ভেঙে রক্তে ছাড়তে। এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষ করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ না করায় শরীর সেই অতিরিক্ত গ্লুকোজ ব্যবহার করতে পারে না। এতে রক্তে শর্করা আরও বেশি বেড়ে যায়।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনে এর তথ্যমতে, অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় না খাওয়ার ফলে শর্করা কখনো হঠাৎ কমে যায় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া), আবার কারও ক্ষেত্রে উল্টো বেড়ে যায় (হাইপারগ্লাইসেমিয়া)।
ডায়াবেটিস রোগী দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে কী হয়

এসব কারণে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল উপায় হলো সঠিক সময়ে সুষম খাবার খাওয়া। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, দিনে তিনবেলার বড় খাবারের পরিবর্তে ৪-৬ বার অল্প অল্প করে খেলে রক্তে শর্করা স্থিতিশীল থাকে। ২০২০ সালে প্রকাশিত জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ছোট ছোট ভাগে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং করা যাবে কি

অন্যদিকে বর্তমানে ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং অনেকের কাছে জনপ্রিয়। তবে ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে এটি করতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অপরিহার্য। কারণ, কারও কারও জন্য সাময়িক ফাস্টিং রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করতে পারে, আবার অন্যদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল স্টাডি বলছে, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ফাস্টিং-এর আগে অবশ্যই ওষুধ, ইনসুলিন ও ডায়েট চার্ট অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে হবে।
অর্থাৎ, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা মোটেও নিরাপদ নয়। বরং সঠিক সময়ে অল্প অল্প করে খাওয়াই সবচেয়ে কার্যকর। আর নতুন কোনো ডায়েট শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।