রাতের খারাপ ঘুমে শুধু ক্লান্তিই আনে না, এটি আপনার শরীরের রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) নিয়ন্ত্রণেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের জন্য ঘুমের অভাব রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন করে তোলে।
ব্যানার-ইউনিভার্সিটি মেডিসিনের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট ডা. সারা তারিক বলেন, ঘুম ও রক্তে শর্করার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পর্যাপ্ত ঘুম না পেলে শরীর একধরনের চাপের অবস্থায় যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
ঘুমের অভাব কিভাবে রক্তের শর্করাকে প্রভাবিত করে

পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে কর্টিসল নামের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। এটি লিভারকে রক্তে আরো বেশি গ্লুকোজ ছাড়তে উৎসাহিত করে। দীর্ঘমেয়াদে এই প্রক্রিয়া ইনসুলিন প্রতিরোধ সৃষ্টি করে, ফলে শরীর ইনসুলিনের সঠিক প্রতিক্রিয়া দেখায় না। অন্যদিকে, রক্তে উচ্চ শর্করা রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব বা অতিরিক্ত তৃষ্ণা সৃষ্টি করতে পারে, যা ঘুম ব্যাহত করে।
আবার রক্তে শর্করা খুব কমে গেলে ঘাম, দ্রুত হৃদস্পন্দন বা উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।
দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব একসঙ্গে কাজ করে রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট করে। ডা. তারিক জানান, উচ্চ কর্টিসল ইনসুলিন প্রতিরোধ, ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়। ক্রমাগত চাপ ও খারাপ ঘুম টাইপ–২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়।

এ ছাড়া ঘুমের অভাব মেজাজ খারাপ, মনোযোগ কমে যাওয়া ও চিনি বা কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবারের প্রতি আকর্ষণও বাড়ায়। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ঘন ঘন দেখা যায় —
- স্লিপ অ্যাপনিয়া : ঘুমের সময় শ্বাস বন্ধ হয়ে আসা
- অনিদ্রা : ঘুমাতে না পারা বা ঘুম ধরে না রাখা
- রেস্টলেস লেগ সিনড্রোম : পায়ে অস্বস্তি, ঘুমাতে সমস্যা
- সার্কাডিয়ান রিদম ডিসঅর্ডার : ঘুম-জাগরণের স্বাভাবিক চক্রে ব্যাঘাত
এই সমস্যাগুলো ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানান।
ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে কিছু ছোট পরিবর্তন বড় প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন —
- দুপুরের পর ক্যাফেইন না খাওয়া,
- ঘুমানোর কমপক্ষে ৪ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা,
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানো ও জাগা,
- ঘুমানোর আগে মোবাইল ও স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা,
- শোবার ঘর ঠাণ্ডা, অন্ধকার ও নিরব রাখা,
- দিনের বেলায় কিছুটা হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করা,
- মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান বা যোগব্যায়াম অনুশীলন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

যদি নিয়মিত ঘুমাতে সমস্যা হয়, ছয় ঘণ্টার কম ঘুম হয়, বা পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও অতিরিক্ত ক্লান্তি অনুভব করেন তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডা. তারিক বলেন, গুণগত ঘুম শুধু শক্তি বাড়ায় না, এটি রক্তে শর্করার ভারসাম্য রক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ঘুম মানেই ভালো স্বাস্থ্য।

